চীনে ১৯৪৯ সালের পর সবচেয়ে বড় স্বর্ণভাণ্ডার খুঁজে পাওয়া গেছে। লিয়াওনিং প্রদেশে অবস্থিত এই খনিতে প্রায় ১,৪৪৪ টন স্বর্ণ থাকা প্রত্যক্ষ হয়েছে। মাত্র ১৫ মাসের নিরলস অনুসন্ধান এবং গবেষণার মাধ্যমে এই বিশাল ভাণ্ডার চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।
চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয় শুক্রবার এ বিষয়ে নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে দাদংগোউ নামের এই খনিটি এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় স্বর্ণের খনি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কর্মকর্তাদের মতে, এই খনিতে প্রায় ২৫.৮৬ লাখ টন আকরিক রয়েছে, যার প্রতি টনে গড়ে ০.৫৬ গ্রাম স্বর্ণ পাওয়া যায়। ফলে এই খনিতে মোট স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় ১,৪৪৪ টন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমান বাজার অনুযায়ী, এই স্বর্ণের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৬৬ বিলিয়ন ইউরো যাকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মূল্য। আর এই বছর বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে; প্রতি কিলোগ্রাম স্বর্ণের মূল্য এখন বেশি থেকে বেশি, শতাধিক ইউরো পর্যন্ত পৌঁছেছে।
এই প্রকল্পটি সম্পন্ন করেছে রাষ্ট্র পরিচালিত লিয়াওনিং জিওলজিক্যাল অ্যান্ড মাইনিং গ্রুপ। তারা প্রায় এক হাজার প্রযুক্তিবিদ ও কর্মী নিয়োগ করে মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে অনুসন্ধানের কাজ সম্পন্ন করেছে, যা বর্তমানে আধুনিক স্বর্ণখনির ক্ষেত্রে বিরল একটি ঘটনা।
প্রথমে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই স্বর্ণের ভাণ্ডারকে ‘অতি-বিশাল’ বলা হলেও এর মান কম। তবে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রাথমিক মূল্যায়ন ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এই স্বর্ণভাণ্ডারটির নির্দিষ্ট অবস্থান এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে অনুমান করা হচ্ছে, এটি লিয়াওনিং প্রদেশের পূর্ব অংশে অবস্থিত। নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে এর অবস্থান সচেতনভাবে গোপন রাখা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে এই সময়ে, যখন মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত। এই বছর স্বর্ণের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। এর পেছনে রয়েছে দুর্বল মার্কিন ডলার, বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার প্রবণতা। বিশেষ করে, উদীয়মান দেশগুলো তাদের রিজার্ভ শক্তিশালী করতে স্বর্ণ কিনছে।
চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বর্ণখনির অনুসন্ধান এবং খনিজ সম্পদের খোঁজ বাড়িয়েছে। ২০২৪ সালে হুনান প্রদেশে ১,০০০ টনের বেশি স্বর্ণের ভাণ্ডার খুঁজে পাওয়া গেছে। একই বছর গাড়্সু প্রদেশে ৪০ টনের বেশি স্বর্ণের খনি পাওয়া যায়।
চীনের স্বর্ণ উৎপাদনও দ্রুত বাড়ছে। ২০২৪ সালে দেশটি প্রায় ৩৭৭.২৪ টন স্বর্ণ উৎপাদন করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ০.৫৬ শতাংশ বেশি। দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণের চাহিদা ছিল প্রায় ৯৮৫.৩১ টন। সাথে সাথে, স্বর্ণের কনসামেশন ও বোর্সের চাহিদাও ২৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বিশ্লেষকরা জানান, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে সম্পদ রক্ষা ও বিনিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার কারণে স্বর্ণের জনপ্রিয়তা সার্বজনীনভাবে বেড়ে চলেছে এবং এটি এখন অন্যতম নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে অনেকে বেছে নিচ্ছেন।






















