রাজধানীর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সোমবার ভোর থেকেই অদ্ভুত এক মাইকিং শোনা যায়, যা সাধারণত কেউ হারিয়ে গেলে প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়। সেখানে বলা হচ্ছিল, ‘একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি… আমাদের হাসিনা খালা (শেখ হাসিনা) গত ৫ আগস্ট সপরিবারে হারিয়ে গেছেন। যদি কেউ তার সন্ধান পান, তবে তাকে হাইকোর্টের ফাঁসির মঞ্চে পৌঁছে দেবেন।’ এই ধরনের বক্তব্য শুনে আশেপাশের মানুষরা অবাক হয়ে যান। এটি সম্ভবত কোনো ধরণের অপপ্রচারের অংশ বা অনাকাঙ্ক্ষিত একটি মিসইনফরমেশন যা পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন হওয়ায় আদালতের চারপাশে সকাল থেকেই ব্যাপক জনসমাগম দেখা যায় বিভিন্ন পেশার মানুষ সেখানে উপস্থিত হয়েছেন রায়ের ফলাফলের জন্য। নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর থাকলেও রাজধানীর যানবাহন স্বাধীনভাবেই চলাচল করা চলছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে।
এদিন জনসম্মুখে পতিত আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচির কোন প্রভাব পড়েনি, বরং বিভিন্ন ইসলামিক দলসহ আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সকাল থেকেই মাঠে ছিল। একদিকে রায়ের দিনকে কেন্দ্র করে তৎপরতা চলছে অপর দিকে, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভে প্রায় এক হাজার চারশোর বেশি মানুষ নিহত ও বিশাল সংখ্যক আহতের অভিযোগে এই মামলাটি দায়ের হয়।
অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বর্তমান রায়ের জন্য বিচারক বিনা বিরতিতে চার দশকের বেশি সময়ের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে এ মামলার শুনানি করেন। এতে মোট ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়, যার মধ্যে বিভিন্ন প্রভাবশালী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষ্যপ্রমাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন আহত ও নিহত ব্যক্তি, সাংবাদিক, চিকিৎসক, পুলিশ আদিত আহত ও নিহতের পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা।
উল্লেখ্য, এই মামলার একাধিক আসামি—including শেখ হাসিনা, অঙ্গীকার ধরা হয়েছে—অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ আনা হয়। বিচারকাজে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অডিও, ভিডিও ও অন্যান্য প্রমাণের পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন নিজে নিজের অপরাধ স্বীকার করে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তি দেন।
এছাড়াও মামলার শুনানিতে অংশ নেন বিভিন্ন স্বাক্ষী, যারা ২১শে আগস্টের হামলার বিষয়ে পরবর্তী তথ্য ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সাক্ষ্য দেন, যেমন আহত শিক্ষার্থী, পুলিশি গুলিতে আহত ব্যক্তি, সাংবাদিক ও চিকিৎসক। এছাড়াও, বিভিন্ন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীর কথাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর, রায়ের তারিখ নিশ্চিত হওয়ার পর, নানা ধরণের পরিস্থিতির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সেকারণে, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লকডাউন, হরতাল ও কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অংশে অগ্নিসংযোগসহ নানা প্রকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন দলের কর্মসূচির ভয়াবহতা ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এভাবে পরিস্থিতি আরও অনিশ্চয়তার দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।




















