অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গাজা গণহত্যার জন্য বিশ্ববাসীর চোখে এক নতুন জরুরি সত্য উদ্ঘাটন করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। তিনি যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি সহ ইউরোপের প্রধান শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, তারা গাজায় চলমান গণহত্যা ও ব্যাপক নৃশংসতার পেছনে জড়িত। আলবানিজ সতর্ক করে বলেছেন, এসব দেশের সরকার বা কর্মকর্তারা যদি এই গণহত্যার সাথে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় কঠোর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। এই উদ্বেগ প্রকাশের সময় তিনি বিশেষভাবে বলেন, এই পরিস্থিতিতে কোন অবস্থাতেই চুপ থাকাটা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, গাজায় চলমান মানবাধিকার লংঘন ও গণহত্যার জন্য ৬৩টি রাষ্ট্র দায়ী, যারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনে সহায়তা করছে। তিনি নিজের সর্বশেষ প্রতিবেদন “গাজা গণহত্যা: একটি যৌথ অপরাধ” এর ব্যাপক বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলেছেন, যদিও গাজা ও পশ্চিম তীরে গণহত্যা ও নৃশংসতার প্রমাণ স্পষ্ট, ইউরোপের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলকে কূটনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আলবানিজ এও বলেন, ব্রিটিশ সরকারের শ্রোতাদের সামান্য কিছু ভূমিকা রয়েছে, যারা ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার বলে পরিচিত, কিন্তু বাস্তবে তাদের এই অবস্থান গণহত্যা বন্ধে বা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। তিনি বিশেষ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের সমর্থনে ব্রিটিশ সরকারের জড়িত থাকার সত্যতা স্বীকার করতে হবে। আলবানিজ দৃঢ়ভাবে বলেন, ব্রিটিশ সরকারের এই সমর্থন গাজার মানুষকে আরও ঝুঁকিতে ফেলছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো এখনো ইসরায়েলের কাছে নানা প্রকার আবরণ বা সমর্থন দিচ্ছে, যা গণহত্যা ঠেকাতে এক বড় ধরনের অন্তরায়। বিশেষ করে জার্মানি ও ইতালির ভূমিকা নিয়ে তিনি দ.Crossত্য দিয়েছেন, এজন্য তারা হয়তো geçmişের ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে। আলবানিজ বলেন, “গণহত্যা প্রতিরোধে এই দুই দেশের দায়িত্ব ব্যাপক। বিশেষ করে জার্মানির ইতিহাসের কারণে তাদের আরো বেশি দায়বদ্ধতা রয়েছে। তারা আরও একবার ইতিহাসের ভয়ঙ্কর অধ্যায়ের দিকে ফিরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গাজায় মানবাধিকার ও গণহত্যা সংক্রান্ত তদন্তের জন্য আলবানিজের ওপর জুলাই মাসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তিনি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ এবং তাঁর সম্পদ ব্যবস্থায় বাধার মুখে। ২৮ অক্টোবর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদর দপ্তরে সরাসরি যোগ দিতে পারছিলেন না, তবে তিনি কেপটাউন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য প্রদান করেন। আলবানিজ বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা এবং সীমাবদ্ধতা সত্যিই দুঃখজনক। একজন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ও প্রতিবেদন প্রকাশের কাজ অচল করে দেওয়া হয়েছে।” তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অন্যান্য জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে থাকা তাদের কূটনৈতিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মোকদ্দমা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফিলিস্তিন ও আফগানিস্তানের নৃশংসতা তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর ও তার ডেপুটির ওপরে নিষেধাজ্ঞা। আলবানিজ এই সিদ্ধান্তকে ‘মাফিয়া-ধাঁচের’ অপপ্রচারে বলে সমালোচনা করেছেন, এবং বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আইসিসির তদন্ত ও বিচার কার্যক্রমের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, “তারা তদন্ত চালিয়ে যেতে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে এবং আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে পারবেন; এই ব্যবস্থা প্রতিরোধের আশঙ্কাও রয়েছে। তবে, আমাদের এটুকু জানা দরকার যে, এই বিষয়ে আমাদের অনেক অনেক কাজ ও ত্যাগের প্রয়োজন রয়েছে। এই দুর্দশার অবসান ঘটানোর জন্য, আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।” আন্তর্জতিক পরিস্থিতি কতটা সংকটাপন্ন, তা স্পষ্ট করে দিতে আলবানিজ আরও বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ও নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়কে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে গণহত্যা ও মানবাধিকার লংঘন রোধ সম্ভব হয়।






















