ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, নির্বাসিত অবস্থায় হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ফলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদে চাপের মধ্যে থাকবে। তার ভাষায়, হাসিনার উপস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে কাঁটার মতো আটকে থাকবে। তবে তিনি এও মনে করেন যে, ভারতের নিজস্ব মিত্রদের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য এটি একটি প্রতিফলন, কারণ ভারতের জন্য এটি রাজনৈতিকভাবে দীর্ঘমেয়াদে কিছু সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কুগেলম্যান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে বংশভিত্তিক দলগুলো দীর্ঘ সময় সংকটে থাকলেও পুরোপুরি বিলুপ্ত হয় না। তাই আওয়ামী লীগকেও পুরোপুরি বাতিল করার সময় এখনও আসেনি। ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিবর্তনে এই দলটির ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।অন্যদিকে ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, হাসিনা ইস্যুতে ভারতের পরিস্থিতি ‘অস্বস্তিকর’। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ভারত বুঝতে পারছে যে বাংলাদেশের বেশির ভাগ জনগণ হাসিনার প্রতি ক্ষুব্ধ, কিন্তু তাকে আবার বাংলাদেশের মূল রাজনীতিতে স্থান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দত্ত আরও বলেন, আদর্শ অবস্থায় ভারত চাইবে একসময় আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরুক, কারণ ‘হাসিনা ভারতের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিকল্প’। তবে বর্তমান বাস্তবতায় ভারতের জন্য প্রয়োজন ঢাকার অন্যান্য রাজনৈতিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন। তিনি আরও যোগ করেন, দুই দেশের সম্পর্ক বর্তমানে খুবই সংকটাপন্ন, তাই হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সম্পর্ক জটিল না করে এগিয়ে যেতে হবে।জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় ভর্ধ্বাজ বলেন, হাসিনা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট—ঢাকার বর্তমান সরকারকে তারা ‘অ্যান্টি-ইন্ডিয়া’ হিসেবে দেখে। ভর্ধ্বাজের মতে, বাংলাদেশে এখন যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আছে, তারা প্রকাশ্যে ভারতের সমালোচনা করে ও হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়াদিল্লিকেই দোষারোপ করছে। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য হাসিনাকে ফেরত দেওয়া হলে সেটি হবে ভারতের বিরোধী শক্তিগুলোর বৈধতা প্রদান, যা বাস্তবসম্মত নয়।ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিদের’ অপরাধের ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে, এবং ভারতের পক্ষ থেকে এই ব্যতিক্রমটাই প্রয়োগ হচ্ছে বলে ভর্ধ্বাজ উল্লেখ করেন। ২০১৩ সালে ছাড়সহ চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও বাংলাদেশ আসামীদের প্রত্যর্পণ করতে বাধ্য। তবে যদি আসামীরার মধ্যে ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ থাকে, তাহলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগও রয়েছে।একদিকে, সম্পর্কের নতুন সমীকরণ গড়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এখন কিছুটা তিক্ততার মুখে পড়লেও, সম্পূর্ণ ভেঙে যায়নি। বাণিজ্য, সীমান্ত নিরাপত্তা, আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। তবে হাসিনা সম্পর্কের বিষয়টি দুই দেশের কূটনীতিতে বড় বাধা হয়ে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ তাকে প্রত্যর্পত করতে চাইলেও ভারত মনে করছে নাว่า এটি সম্ভব। অন্যদিকে, ভারতও বুঝতে পারছে যে ঢাকার নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।






















