নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচননী আচরণবিধি, প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয় ও স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনা এবং রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে লোকবল নেওয়া এড়িয়ে, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব লোকবল দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করা উচিত। এর ফলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়বে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জাতীয় সংলাপে তিনি এই মন্তব্য করেন। ড. মঈন খান বলেন, এই ধরনের সংলাপ নতুন বিষয় নয়; এর আগে বিভিন্ন সময় আমরা এগুলোর মাধ্যমে কিছু সফলতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। তবে সংলাপের প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই।
প্রার্থীদের করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি আবেদনকারীকে অবশ্যই নিয়মনীতি মেনে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আচরণবিধির প্রতিপালন করা বাধ্যতামূলক। এটি নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই।
তফসিলের বিষয়ে তার কঠোর অবস্থান না থাকলেও তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি অনুমান করেন, তফসিলের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম। তিনি আরও যোগ করেন, আমরা এর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম, কিন্তু সব কিছু বাস্তবায়নে এখনও দেখিনি।
নিয়মনীতি প্রণয়নের বিষয়ে তিনি ভিন্নমত ব্যক্ত করে বলেন, যতই অঙ্গীকারনামা নেওয়া হোক, যদি নিজস্ব পরিবর্তন না আসে, তবে তা কার্যকর হবে না। এই ধরনের অঙ্গীকারনামায় শাস্তির স্পষ্ট বিধান থাকা দরকার, কারণ নিয়ম লঙ্ঘন বাড়তেই থাকবে।
বর্তমানে কথাবার্তা ও মতবিনিময় পরিবেশে প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আধুনিক যুগে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভুল তথ্য বা মিসইনফরমেশন ছড়ানোর বিষয়টি উদ্বেগজনক। বাকস্বাধীনতা থাকা জরুরি, তবে এর অপব্যবহার রুখতে দায়িত্বশীলতার উপর গুরুত্ব দেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশ এখন একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে, এ সময়ে ইসি-র ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ক্ষমতা যথাযথভাবে ব্যবহার করে স্বচ্ছ নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। ইসি তাদের নিজস্ব লোকবল থেকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের দাবি জানান তিনি, কারণ এতে যে গুণগত পরিবর্তন আসবে, তা দেশের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
ড. মঈন খান জানান, নিয়ম ভাঙলে তা মহামূখ্য হয় না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর, আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে তিনি বলেন, স্বাধীনতা মানে সবকিছু করে ফেলা নয়; এ জন্য কিছু নিয়মকানুনের ভেতর থেকে কাজ করতে হয়।
অঙ্গীকারনামা দেওয়ার নিয়মের বিষয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, তিনি নিজে অনেক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, কিন্তু কখনো অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। তিনি সতর্ক করে দেন, যদি নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে অঙ্গীকারনামা কেবলই ভিত্তিহীন হয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যাতে নিয়মকানুন সহজ ও সরল করে দেয়, যাতে মানুষ সচেতন ও সঠিক পথে থাকতে উৎসাহ পায়, এ বিষয়ে তিনি পরামর্শ দেন।
প্রযুক্তির ব্যবহারে তিনি স্বীকার করেন, নিজে একজন প্রযুক্তিবিদ না হলেও তিনি এআই ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভুল তথ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি আরও বলেন, বাকস্বাধীনতা থাকা অবশ্যই জরুরি, তবে এর অপব্যবহার রোধে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে হবে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য না থাকা এবং ধর্মীয় উপাসনালয়কে রাজনৈতিক প্রভাবের জন্য ব্যবহার না করার বিষয়ে তিনি একমত। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ধর্মকে কেবলমাত্র রাজনীতির কারণ হিসেবে ব্যবহার হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
সবশেষে, তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বাইরে থেকে লোক নেওয়ার পরিবর্তে, কমিশনের নিজস্ব নিয়োগে জোর দেন। এতে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও গুণগত মানসম্পন্ন হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ইসি যেন তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যবহার করে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।




















