মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন পালক যোগ করেছেন মুশফিকুর রহিম। এ ম্যাচে দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০তম টেস্টের মাইলফলক স্পর্শ করে তিনি শতক হাঁকিয়েছেন, যা তাকে বিশ্বের ১২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করার গৌরবও এনে দিয়েছে। ৩৭ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের এই অর্জন ছিল এক অসাধারণ কীর্তি।
শততম টেস্টের দিন মাঠে ছিল এক অনন্য উত্তেজনা। মিরপুরের ক্রিকেটের দেবস্থানে শুরু থেকেই স্পৃহা ছিল ভিন্ন এক রকম। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রতিটি মুহূর্তে মুশফিকের জন্য অপেক্ষা করে থাকছিলেন। প্রথম দিন শেষে তিনি ৯৯ রানে অপরাজিত থাকলে, সবাই আশা করছিলেন তার শতক দ্রুতই আসবে। রাতভর উদ্বেগের মধ্যে, দ্বিতীয় দিন ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তিনি, লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে। প্রথম ওভার খেলেও লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি, তবে দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে এক রান করে নিজের শতক পূর্ণ করেন, যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এক স্মরণীয় মুহূর্ত। এই সেঞ্চুরি শুধু তার জন্য নয়, দেশের ক্রিকেটভক্তদের জন্য এক বিস্ময়কর উদযাপন।
সেঞ্চুরির পর মুশফিকের উচ্ছ্বাস ও আবেগের একটু প্রকাশ দেখা যায়, সাথে উপস্থিত অনেক ক্রিকেট প্রেমীও তার আনন্দে ভাসে। এ দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে মিরপুরে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা অনুষ্ঠিত হয়। মুশফিককে দেয়া হয় বিশেষ টেস্ট ক্যাপ এবং ক্রেস্ট। তার প্রথম টেস্টের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন এবং দেশের অন্যতম টেস্ট ক্যাপধারী আকরাম খান উপস্থিত থেকে তাদের সম্মাননা সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করেন। আরও এক বছর আগের প্রথম টেস্টের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও শততম টেস্টের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে উপহার দেন বিশেষ টেস্ট জার্সি।
খেলাপ্রারম্ভে টস জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। ওপেনাররা ভালো খেলে শুরু করলেও সাদমান ইসলাম ৩৫ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে যান, আর মাহমুদুল হাসান জয়ও ৩৪ রানে আউট হন। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বড় রান করতে না পারলেও, প্রথম সেশনে তিন উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর মুমিনুল হক দলের জন্য জীবন পান এবং মুশফিকের সাথে মাঝারি ধীরগতিতে এগিয়ে যেতে থাকেন। ধীরে ধীরে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন, এরপর মুমিনুল আউট হওয়ার পর লিটন দাসের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের রান সংগ্রহ আরও বাড়াতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ২৯২ রান করে, যেখানে মুশফিক ৯৯ রানে ও লিটন দাস ৪৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।
শততম টেস্টে সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা ছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্বের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ। এবং দ্বিতীয় দিন সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে, যখন মুশফিক তার শততম রান করে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখিয়েছেন। এই দিনটি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা, যেখানে একজন ক্রিকেটার তার ব্যক্তিগত সাফল্যও দেশের সম্মানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।






















