বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জনগণের ধর্মীয় নেতাদের জন্য আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করা হবে—এমন পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত ইমাম-খতিব জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে যে, দেশের ইমাম, খতিব এবং মুয়াজ্জিনরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তারা অসংখ্য সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মানুষের নৈতিক এবং আত্মিক উন্নয়নে প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। দেশের একটি নৈতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গঠনে এ সকল ধর্মীয় নেতাদের অবদান অমূল্য। সেই ভাবেই, যারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন, তাদের জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো আর্থিক সহায়তা প্রদান।
একারণে, বিএনপির পরিকল্পনা রয়েছে, প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানী ভাতা প্রদান করবে। যদি এবারের সংসদ নির্বাচনে তারা সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে এই কার্যক্রম ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
অতিরিক্তভাবে, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করে আরও বেশি প্রকল্প চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে দলের। এর সাথে তিনি আলেম ও ওলামাদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাধারণ মুসলমানদের চেয়ে আপনারা ইসলাম বিষয়ে বেশি সুসংগঠিত এবং বিশুদ্ধ জ্ঞানে সমৃদ্ধ। একজন মুসলমানের জন্য আবশ্যক, তওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতের প্রতি অটুট বিশ্বাস। এছাড়া, কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত—এসব ইসলামবিধানের মূল ভিত্তি। এই পাঁচটি বিষয়ের উপরে সকল মুসলমানের সম্মতিও রয়েছে, তবে মাঝে মাঝে রাজনীতি বা দলীয় স্বার্থে এসব বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, আল্লাহর ওপর অটল বিশ্বাসঘেঁটেই ইসলামকে এগিয়ে নিতে হবে, যাতে ধর্মের মূল আদর্শ অক্ষুণ্ন থেকে সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় থাকে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি কখনোই ইসলামের মূল নীতি-মূলবোধের সাথে আপস করবে না। আবারও বলি, দেশে তখনকার স্বৈরাচারী সরকারের রচিত সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আস্থার কথা ছিল না। এখনো সেই বিশ্বাসের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে এর মধ্যে নেই। কেন এ পরিবর্তন হলো, সেটাই এখনো স্পষ্ট নয়।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বিএনপি সব সময় ইসলামের স্বার্থবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ছিল। ২০২৪ সালে রমজানে ইফতার অনুষ্ঠান বন্ধের মতো ঘটনা ছিল প্রমাণ, এটা ছিল ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজত নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারী দমন-পীড়নের প্রতিবাদেও বিএনপি বিক্ষোভ ও কর্মসূচি দিয়েছিল।
শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসার ডিগ্রি স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের সময় নেওয়া হয়েছিল, যার মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০ হাজারের অধিক মাদ্রাসা ও লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রত্যেকটি মসজিদসহ ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিনদের জন্য এই দিকটি গুরুত্বপুর্ণ। বিএনপি ভবিষ্যতে এই সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের জন্য পৃথক সার্ভিস রুল প্রণয়ন এবং তাদের দাবি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে উৎসাহ দেবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
অতীতে চালু থাকা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের দুর্যোগপ্রতিরোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উন্নয়নমূলক কাজে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। এভাবে দেশের লক্ষ লক্ষ মুসলমানের ধর্মীয় জীবন আরো সুন্দর ও নিরাপদ হবে, পাশাপাশি ন্যায়বিচার ও সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অশেষ দলে দলে ঈমানদার মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা, শান্তি এবং সমৃদ্ধি অর্জনে কাজ করার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান। ভবিষ্যৎ স্বচ্ছ, ন্যায্য ও বাস্তবসম্মত বাংলাদেশের জন্য বিএনপি তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের সকল সম্মানিত ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা ও দোয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করেন।




















