চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহাজাহান চৌধুরীর বিদায়ী বক্তব্যের কারণে ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথা বসবে।’ এই মন্তব্যের কারণে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি তাকে আইনের আওতায় এনে দমন করার জন্য দাবি জানিয়েছে। রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মোঃ এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান এই দাবি পেশ করেন। নেতারা বলতে থাকেন, শাহাজাহান চৌধুরীর এই বক্তব্য স্পষ্টতই প্রমাণ করে তারা অধিকতর অন্ধকার যুগের ফ্যাসিবাদ আবারও প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। যদিও জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বক্তব্যটি তার ব্যক্তিগত মতামত, দলীয় বা প্রতিষ্ঠানের কোনও বক্তব্য নয়। তাদের মতে, এই মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ষড়যন্ত্রপ্রসূত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ, স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ। এটি নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থিতিশীল ও উত্তেজনামূলক করতে এক ধরনের অপচেষ্টা, যা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানে। বিএনপি নেতারা বলেন, প্রশাসনের প্রতি প্রকাশ্য হুমকি, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেওয়া এবং ভোটাধিকার খর্ব করার এই ধরনের বক্তব্য এক অন্যায় ও জঘন্য কাজ। এটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংসের প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা যায়। নেতারা আরও বলেন, এই মন্তব্যে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে, যা অতীতের মানবতাবিরোধী অপশক্তির বর্বরতা ও দমননীতির স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তারা দাবি করেন, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সকল রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, কিন্তু শাহাজাহান চৌধুরীর এই বক্তব্য প্রকাশ পেয়ে ভোটের পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। নেতারা সুস্পষ্টভাবে জানান, শাহাজাহান চৌধুরীকে তার এই বিষোদগার অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, জনসম্মুখে মোক্ষম ক্ষমা চাইতে হবে এবং এই ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য দ্রুত আইনের আওতায় আনা জরুরি। তারা বলছেন, দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এসব উসকানিমূলক কাজ একতরফা গর্হিত অপরাধ। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে থাকবে এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় আপসহীনভাবে কাজ করে যাবে। উল্লেখ্য, শনিবার রাতে চট্টগ্রাম শহরের জি.ই.সি. কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সম্মেলনে জামায়াতের আমির ডাঃ শফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এই সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা শাহাজাহান চৌধুরী, যেখানে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনি এলাকা থেকে প্রশাসনের মানুষদের আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, বসবে, গ্রেফতার হবে, মামলা হবে।’ তবে, এই বক্তব্যের সময় জামায়াতের আমির উপস্থিত ছিলেন না। শাহাজাহান আরও বলেন, ‘আপনাদের প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকরা যেন আমাদের কথায় হাঁটেন, পুলিশ যেন আমাদের নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সব কিছুতেই যেন আমাদের প্রাধান্য পায়।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সচিব আরেক নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘এগুলো তাঁর ব্যক্তিগত মন্তব্য, দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। প্রশাসন স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করবে, দলীয় হস্তক্ষেপ বা প্রভাবের আশঙ্কা থাকলে সেটা সঠিক নয় এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করবে। স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করাই কঠিন হবে।’






















