বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার বন্দর বা এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে দেশ নির্বাচিত সরকার না থাকলে, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না। তারেক রহমান এ মন্তব্য করেন, মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ফেসবুকে প্রকাশিত এক পোস্টে, যেখানে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ঢাকার পানাগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানিকে নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি বললেন, “একটি ছোট গার্মেন্টস মালিকের গল্প দিয়ে শুরু করি। তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তার ব্যবসা চালাচ্ছেন, তার শ্রমিকরা কয়েকশো। সীমিত আয়ে কাজ চালাতে হয় তাদের, আর তীব্র বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়। একসময় যেসব শুল্ক সুবিধা পেতেন, সেগুলোর অবসান ঘটে নিঃশব্দে, যার ফলে তার ক্রয়াদেশ কমে যায়, আর অর্থনৈতিক চাপ বাড়তে থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “একইভাবে, নারায়ণগঞ্জের একজন তরুণ স্নাতক দেখছি—তার পরিবারে যেমন অনিশ্চয়তা, তেমনি তার বাবা একটি কারখানায় কাজ করেন। রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে ওভারটাইম বন্ধ হয়, তারপর শিফট কাটা হয়, শেষমেশ চাকরি হারানো হয়—এসব গল্প সংবাদ শিরোনামে আসে না, অথচ এটাই দেশের ঘরের অভ্যন্তরের বাস্তব সংকট।”
তারেক রহমান আরও বলেন, “এই পরিস্থিতির জন্যরা যে সিদ্ধান্ত নেয়, তার জন্য তারা ভোট দেননি আর কখনোও তাদের কোন জিজ্ঞাসা করা হয়নি। এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত বা চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে একই চিত্র দেখা যায় — সব কৌশলগত বিকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, জনগণের সমালোচনা উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং অতি দ্রুততার অজুহাতে যুক্তিগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।”
সরকারি বিবৃতির উপর বিতর্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো আসলে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি আগেও বলেছে, সময় নেওয়ার বিকল্পের দিকে না গিয়ে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা সম্পূর্ণরূপে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যাকে নিয়ে কোনো ভোট বা গণতান্ত্রিক মতামত নেওয়া হয়নি। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কোনো নির্বাচনমূলক ম্যান্ডেটও নেই, তবুও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে যা দেশের অর্থনীতিকে বহু বছর প্রভাবিত করবে।
তিনি আরও বললেন, “আমাদের বলা হয়েছে দেরি করা অসম্ভব এবং অস্বীকারও অপমানজনক। জাতিসংঘও পর্যাপ্ত বিবেচনা করবে না। তবে ইতিহাস দেখায়, পরিস্থিতি আরও জটিল।”
তিনি উল্লেখ করেন, অ্যাঙ্গোলা ও সামোয়ার মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে সময়সীমা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে সময়সীমা পুনঃনির্ধারণ করা যায়। এর মানে, দেশের ভবিষ্যৎ গঠন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ প্রয়োজন। কেন আমরা সেটির পরিবর্তে বিকল্প না থাকার ভান করছি? কেন নিজেদের ভবিষ্যৎ সংকুচিত করছি?
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, বিকল্প প্রকাশ্যে বাতিল করে আমরা নিজেদের আলোচনা শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছি। আন্তর্জাতিক দর-কষাকষির সময় আমাদের অবস্থান নির্ধারণের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।”{newline}
তিনি বলেন, “সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাংকিং সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, ঋণের ঝুঁকি ও রপ্তানি শ্লথ হয়ে আসার চাপ মোকাবিলা করছে। এগুলো উত্তরণের পক্ষে নয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা রেখেছে, কিন্তু ‘যোগ্য’ হওয়া আর ‘প্রস্তুত’ হওয়া আলাদা বিষয়। সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রকৃত শক্তি হলো, গভীর প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার শৃঙ্খলা রক্ষা।”
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড ও চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের পরিস্থিতি লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। সেখানে যা ঘটে, তা নিয়মিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে নয়; বরং দেশের সম্পদ ও ভবিষ্যতের জন্য একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। এইসব সিদ্ধান্ত কোনো গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট ছাড়া নেওয়া হয়েছে।”{newline}
তিনি আরও বলেন, “এলডিসি থেকে উত্তরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো যেমনই হোক, একই রকম চিত্র চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষেত্রেও দেখা যায়—সব কৌশলগত বিকল্প বন্ধ, জনগণের সমালোচনা উপেক্ষা, অতি দ্রুততার অজুহাতে সত্যিকার উদ্বেগগুলো দমন।”
আলোচনার একান্ত প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ বা বিষয়ে অপমান নয়। মূল বিষয় হলো, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ও নীতির পালন। এসব সিদ্ধান্ত অবশ্যই সেই সরকারের নেওয়া উচিত, যাদের কাছে গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা রয়েছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে তিনি বার্তা দেন, “বাংলাদেশের কেউ বলে না যে এলডিসি থেকে উত্তরণ অসম্ভব, বা বন্দর সংস্কার ঠিক নয়। মূল বক্তব্য হলো, যে সরকার নির্বাচন দিয়ে আসেনি, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না। কৌশলগত ধৈর্য কোনো দুর্বলতা নয়, জনগণের মতামত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিলম্ব নয়, বরং দেশের সত্য ও স্বার্থের জন্য অপরিহার্য।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ কখনো তাদের ভবিষ্যৎ বিষয়ে নীরব থাকেনি; তারা সবসময় মর্যাদা রক্ষা, মতপ্রকাশ এবং চাহিদা জানানোর জন্য ত্যাগ স্বীকার করে এসেছে। দেশের মানুষের চাওয়া সাধারণ—তাদের কথা শোনা হোক, অংশ নিতে সুযোগ দেওয়া হোক এবং সম্মানিত করা হোক। এই কারণেই ভবিষ্যতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নিবার্চনে তাকানো হয়েছে। এটি একটি সুযোগ, যেখানে দেশের মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করতে, গ্রহণক্ষমতা দেখাতে ও নতুন সত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন। কারণ, এ দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই গড়ে উঠবে, যারা এখানে বসবাস করে এবং বিশ্বাস করে—সবার আগে বাংলাদেশ।”






















