ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও কার্যকর থাকবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনী তাদের নির্ধারিত ভূমিকা পালন করবে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত হবে। গত বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভার পর ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
আখতার আহমেদ আরও জানান, ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানের outline সাজানোর কাজ চলছে; সংশ্লিষ্ট বাহিনী বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করবেন। কেন্দ্রীয়ভাবে নিরাপত্তার জন্য স্ট্যাটিক (স্থায়ী) নিরাপত্তা কর্মী থাকবে, পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানেই মোবাইল চেকপোস্ট ও পর্যবেক্ষণে থাকবে মোবাইল কম্পোনেন্ট। তারা স্থান পরিবর্তন করে প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এই ডেপ্লয়মেন্টের জন্য গাইডলাইন ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব বাহিনী না থাকলেও, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টায় কাজ চালানো হবে, এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে কমিশন। তারা প্রথম দিন থেকেই মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করবে এবং আইনশৃঙ্খলার ওপর তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
সেনা বর্তমানে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই বাহিনী তাদের ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা ২০২৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এসব ক্ষমতা আইন ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নাকি নয়, সেই বিষয়েও স্পষ্ট করেছেন ইসি সচিব।
ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানের মূল অংশ তিন ভাগে বিভক্ত: কেন্দ্রভিত্তিক স্ট্যাটিক নিরাপত্তা, বিভিন্ন স্থানে স্থির বা মোবাইল চেকপোস্ট এবং গিরিং বা পর্যবেক্ষণে মোবাইল কম্পোনেন্ট। সংশ্লিষ্ট বাহিনী এই পরিকল্পনা অনুসারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।
অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ইসি ভবিষ্যতে সাইবার নিরাপত্তা সেল গঠন করবেন, যাতে অপপ্রচার ও ভুল তথ্য রোধে বিভিন্ন গণমাধ্যমের পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম আরও জোরদার হয়।
পর্যাপ্ত যোগাযোগের জন্য দ্বিমুখী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—উপর থেকে নিচে এবং নিচ থেকে উপরে—এবং তথ্যের প্রবাহ সঠিকভাবে নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পরিচালনা করতে পারায়, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছে কমিশন।
বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে নেটওয়ার্ক সেবা ও ইন্টারনেট নিশ্চিতের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, অপহরণ বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হবে ও সন্ত্রাসীদের নজরদারি চালানো হবে।
এছাড়া, বিদেশ থেকে আসা পোস্টাল ভোটের জন্য এয়ারপোর্ট ও ডাকবাছাই কেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। সব পর্যায়েই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে অপ্রয়োজনীয় সুবিধা নেওয়া হবে না, এই বিষয়েও স্পষ্ট নির্দেশনা বলেছে ইসি। যানবাহনের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় সমাধানও চূড়ান্ত পরিকল্পনার অংশ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে, নভেম্বরের প্রথম দিকে সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা ৩ মাসের জন্য বাড়ানো হয়। পাশাপাশি, দীর্ঘ মেয়াদে সেনা কর্মকর্তাদের এই ক্ষমতা থাকছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। উল্লেখ্য, ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা কর্মকর্তাদের এই প্রশাসনিক ক্ষমতা মোতায়েন করা হয়েছিল।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে নির্বাচন শেষে অন্তত ১৫ দিন পর্যন্ত সেনাবাহিনী তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা রাখবে, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।






















