বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে আকাশপথে সরাসরি সেবা চালু হচ্ছে আবার। পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান জানিয়েছেন, খুব দ্রুতই করাচি রুটে সপ্তাহে তিনটি সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে বাংলাদেশ বিমান। এই উদ্যোগটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও সংযোগ আরও বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
খবরটি জানানো হয়, বুধবার ভারতের ফরেন সার্ভিসেস অ্যাকাডেমিতে এক বক্তৃতায় এই তথ্য দেন হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান। এই বক্তৃতার সময় তিনি জানান, সম্প্রতি এই অ্যাকাডেমিতে বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য নতুন করে লেকচার সিরিজ শুরু হয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষণরত তরুণ পাকিস্তানি কূটনীতিকরা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার সুযোগ পাচ্ছেন।
উপস্থিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু করছি। আমাদের জাতীয় বিমান সংস্থা সপ্তাহে তিনবার করাচিতে ফ্লাইট পরিচালনা করবে।’ পাশাপাশি ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উল্লেখ করেন, যেমনটি বাংলাদেশের উড়োজাহাজ ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করে, তেমনি পাকিস্তানের ফ্লাইটগুলোও ভারতের ওপর দিয়ে উড়বে।
সূত্রের ভাষ্য, পাকিস্তানের ওপর ভারতের চলমান আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে পাকিস্তানি বিমান সংস্থাগুলোর জন্য ঢাকা রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে বাংলাদেশি এই হাইকমিশনার তরুণ কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বক্তৃতা দেন এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য, সংযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির অসাধারণ সুযোগ থাকলেও সীমিত প্রবেশাধিকার, সীমান্ত সমস্যা ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক জটিলতা এই অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর অনেক সুযোগ থাকলেও সীমিত প্রবেশাধিকার সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। অতীতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেল পথে দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন সহজ ছিল, কিন্তু এখন কাজের অগ্রগতির বদলে খেজুরসহ অন্যান্য পণ্য বিভিন্ন পথে বহন করে আনা হয়, এমনকি দুবাই ঘুরে পৌঁছে যাচ্ছে।
তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, সরাসরি বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেলে ব্যবসায়ীরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন এবং কৃষকদের আয়ও বৃদ্ধি পাবে। কাশ্মিরের শতবর্ষী পশমিনা শিল্পের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, খেজুর ও পশমিনার মতো ঐতিহ্যবাহী পণ্য সরাসরি রুটে বাণিজ্য করলে তা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে ক্ষতিগ্রস্ত ভৌগোলিক সংযোগকে তিনি সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেন। একসময়ে কাবুল, পেশোয়ার, ঢাকা থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত প্রাচীন বাণিজ্যপথ সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে সেই সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি বলেন, কেউ একা উন্নতি করতে পারে না, তাই আঞ্চলিক সহযোগিতা দরকার, যার জন্য বিমসটেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ।
তার মতে, ঔপনিবেশিক মনোভাব, মতাদর্শের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে দুর্বল করছে। তিনি উল্লেখ করেন, দক্ষিণ এশিয়ার তরুণ প্রজন্ম এখন আগের চেয়ে বেশি সচেতন, পরিবর্তনপ্রত্যাশী। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের যুব সমাজের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
ইকবাল হুসাইন খান বলেন, ‘নতুন নেতৃত্ব গঠিত হলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি দ্রুত হবে, পুরোনো বাধাগুলো ভেঙে যাবে। কিছু কৃত্রিম সীমাবদ্ধতা থাকলেও মানুষ একে–অপরের কাছে আসার অভিলাষী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে এবং উন্নত নেতৃত্ব তৈরি হবে।’


















