পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইশহাক দার বলেছেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং চীনকে কেন্দ্র করে একটি ত্রিদেশীয় জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই জোটে আরও অন্যান্য দেশকে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক পরিধি আরও বাড়াতে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন। এ ছাড়া, তিনি জানান, এই অঞ্চলের বাহিরে অন্য কোনও দেশের অংশগ্রহণও সম্ভব হতে পারে।
গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত কনক্লেভ ফোরামে এক বক্তৃতায় ইশহাক দার বললেন, “আমরা আন্দোলিত হয়ে অন্যের ক্ষতি নয়, বরং সহযোগিতার মাধ্যমে পুরো অঞ্চলকে এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে। আমরা সবসময় সংঘাতের বদলে সম্প্রীতির দিকে এগোতে পছন্দ করি।” তিনি উল্লেখ করেন, নতুন এই জোট পাকিস্তানের জন্য সার্কের বিকল্প কিছু প্রতিষ্ঠার চেষ্টার অংশ, কারণ ভারতে বিরাজমান উত্তেজনার কারণে সার্ক কার্যকর থাকতে পারেনি।
জানা গেছে, 지난 জুনে চীন-পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেছিলেন, যেখানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। তারা স্পষ্ট করে বলেছিলেন, এ আলোচনা কোনও অন্য দেশের লক্ষ্য নয়।
অবশ্য, ইশহাক দার এই কথাবার্তার সময় আঞ্চলিক উত্তেজনা চলমান থাকাকালে সেই আলোচনাগুলোর গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেন। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কলহ-সংঘাত চলে আসছে, যার মধ্যে মে মাসে দুই দেশের মধ্যে চারদিনের যুদ্ধও হয়েছিল। এছাড়া, গত বছর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে, বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় সম্পর্কের তিরি ডুবতে থাকে। মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনার মৃত্যুদণ্ড হলেও ভারতের পক্ষ থেকে এখনো তাকে ফেরত পাঠানোর কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।
পাকিস্তানের এই প্রস্তাব বা উদ্যোগ কেমন ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা চলছে। ইসলামাবাদ কনক্লেভে ইশহাক দার বললেন, “আমাদের নিজের জাতীয় উন্নয়ন ও আঞ্চলিক স্বার্থ বড়, সুতরাং কোনও রাজনৈতিক অচলাবস্থা আমাদের অগ্রগতি রুখে দেবে না। আমি জানি, ভারতের সাথে সম্পর্ক আরও আরও ভালো করার ওপর আমাদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার।”
তিনি আরও মন্তব্য করেন, “দক্ষিণ এশিয়ার সীমাবদ্ধ সম্পর্কের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক অঙ্গনে অনেক সম্ভাবনা অপচয় হচ্ছে। তবে, সার্কের বদলে আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন পথ খুঁজে বের করতে চাই।” তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তানের এই উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জটিল হবে এবং চীন-ভারত সম্পর্কেও চাপ সৃষ্টি হবে।
সাধারণত, দক্ষিণ এশিয়া বড় আঞ্চলিক সংগঠনের ব্যর্থতা, উচ্চ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকটের কারণে স্বল্প পরিসরে উঠে আসা এই প্রস্তাব নতুন আঞ্চলিক জোটের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে তোলে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই উদ্যোগ কার্যকরী হলে এর ফলাফল আরেকবার দেখাতে পারে আঞ্চলিক সংঘর্ষ ও দ্বন্দ্বের বাড়বাড়ন্ত। সবকিছুর উপর নির্ভর করছে এই জোট কেমনভাবে গড়ে ওঠে ও দেশের স্বার্থে কতটা কার্যকর হয় সেটাই দেখার বিষয়।


















