দুই হাজার টাকা চুরির জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গৃহকর্মী আয়েশা মা ও মেয়েকে হত্যা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করে।
আয়েশা নরসিংদী সদর থানার সলিমগঞ্জের রুবিউল ইসলামের মেয়ে। তিনি ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর পূর্বহাটি এলাকায় স্বামী রাব্বী সিকদারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ডিএমপি জানায়, দুই হাজার টাকা চুরি করে ধরা পড়ায় গৃহকর্ত্রী লায়লা ফিরোজের সঙ্গে আয়েশার ঝগড়া শুরু হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে বাসা থেকে ছুরি নিয়ে এসে লায়লার উপর হামলা চালায়। এ সময় লায়লার ঘুমিয়ে থাকা মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজও ঘটনার শিকার হন। বিচারকালে, আয়েশা মায়ের সঙ্গে ধস্তাধস্তি দেখে তার ঘুম ভেঙে যায়। সে দারোয়ানকে ঘটনাটি জানাতে ইন্টারকমে কল করেছিল, কিন্তু আয়েশা তখনও মারধর করে তাকেও হত্যা করে।
আয়নাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জানায়, তিনি নরসিংদীর সলিমগঞ্জের রুবিউল ইসলামের মেয়ে। ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। পুলিশ জানায়, তার স্বামী রাব্বী সিকদারকেও তারা হেফাজতে নিয়েছেন।
পুলিশের তদন্তে জানা যায়, এই হত্যা ঘটনাটি প্রথমে পরিকল্পিত ছিল। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ এ রহস্য উন্মোচনে তৎপরতা চালায়। প্রথমে আয়েশার বাসা শনাক্ত করা হয়। পরে মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, আয়েশা ঝালকাঠির নলছিটি এলাকার অবস্থান করছে। পরে সেখানে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। একই সাথে তার স্বামী রাব্বীকেও খুঁজে নেওয়া হয় ও আটক করা হয়।
প্রথমে জানা যায়, সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) ছুরিকাঘাতে খুন হন। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে পড়তেন।
ঘটনার পরপরই, আয়েশাকে অভিযুক্ত করে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন তার স্বামী আ. জ. ম. আজিজুল ইসলাম। মামলায় তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
মামলার বরাত দিয়ে জানা গেছে, আয়েশা সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় বাসায় আসে এবং পরে ৯টা ৩৫ মিনিটে তার মেয়ে স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে পলায়ন করে। পলায়নের সময় তার সঙ্গে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ অন্যান্য দামী জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
আয়েশার স্বামী রাব্বীর সন্ধানও পাওয়া গেছে। তারা জানায়, ঘাতক আয়েশা একমাত্র পরিকল্পিতভাবে মা ও মেয়েকে হত্যা করেছে। ঘটনা ঘটার কয়েক দিন আগে, আয়েশাকে তার বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে রাখা হয়। ঘটনার দিন সকালে আয়েশা কাজে যোগ দিয়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে, স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বহুবার কল করেও না পেয়ে, বেলা ১১টার দিকে তিনি ফিরে আসেন।
অভিযুক্ত এই ঘটনায়, তার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা অনেক সহজে আঘাতের কারণ খুঁজে পাননি, কিন্তু তদন্তে জানা যায়, আয়েশার পরিকল্পনাটি ছিল পুরোপুরি পরিকল্পিত। পরিবারের ধারণা, সে পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরত্ব তৈরি করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এই ঘটনাটি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায়, পুলিশ ব্যাপক ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামে এবং প্রযুক্তি সহায়তায় রহস্য উন্মোচনে কাজ করে।






















