ইরানি মানবাধিকারকর্মী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গিস মোহাম্মাদিকে আবারও গ্রেফতার করেছে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) মাশহাদ শহরে আহত আইনেরজীবী খোসরো আলিকোরদির স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সময় তাকে হত্যার ভয়ে ‘হিংস্রভাবে’ আটক করা হয় বলে জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক নার্গিস ফাউন্ডেশন।
সিএনএন জানিয়েছে, এই অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা বাহিনী হানা দিয়ে নার্গিসসহ আরও কয়েকজন কর্মীকে আটক করে। এই ইভেন্টটি নিহত আইনজীবী খোসরো আলিকোরদির স্মরণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নর্ভেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গিস মোহাম্মাদি ইরানের একজন প্রখ্যাত মানবাধিকার আইনজীবী। তিনি দীর্ঘ দুই দশক ধরে মূলত তেহরানের কুখ্যাত অ্যাভিন কারাগারে বন্দী ছিলেন। এই কারাগারটি সাধারণত সরকার বিরোধী ও সমালোচকদের জন্য নির্ধারিত। তিনি রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ এবং প্রচারে যুক্ত থাকায় মোট ৩১ বছরের সাজা ভোগ করছেন।
২০২৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে যাওয়ার পরে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এক অস্ত্রোপচারের জন্য তার দণ্ড কিছু সময়ের জন্য স্থগিত হয়। যদিও কিছু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকার পরও তিনি জেল থেকেই মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। গত এক বছরে তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন এবং ইরানের পরিস্থিতির কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন।
সপ্তাহখানেক আগে টাইম ম্যাগাজিনে লিখা এক নিবন্ধে নার্গিস বলেছেন—“ইরানি জনগণ আসলে কোনো শান্তিই পায় না। কারণ, দেশটি তাদের ব্যক্তিগত জীবন সবদিক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে। নজরদারি, সেন্সরশিপ, গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং সহিংসতার হুমকিতে তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে।” তিনি দেশের নাগরিক সমাজ, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার রক্ষকদের জন্য বিশ্বব্যাপী সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২৪ সালে সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন—“আমি অ্যাভিনের ভেতরে বা বাইরে থাকি না কেন, লক্ষ্য একটাই—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।”
নার্গিস মোহাম্মাদি কারাগারে থাকাকালীন নারীদের ওপর নির্যাতন ও যৌন সহিংসতার অভিযোগ করে আসছেন, এ বিষয়ে তিনি বিভিন্ন চিঠি ও বিবরণে ১৯৯৯ সাল থেকে নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেছেন। তবে, ইরানি সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
তার যমজ সন্তান কিয়ানা ও আলি ২০২৩ সালে নরওয়েতে অনুষ্ঠিত নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। তার স্বামী তাগি রাহমানিও দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে রাজনৈতিক বন্দী ছিলেন।






















