জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে পুনর্বাসনের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা গোপনে আওয়ামীপন্থী মতামত প্রকাশ করছেন, জয় বাংলা স্লোগান কোর্ট পাড়ায় শোনা যাচ্ছে এবং টক শোতে আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবীরা অংশ নিচ্ছেন। এগুলো দেখেই মনে হয়, জাতীয় পার্টিকে প্রস্তুত করা হচ্ছে, যেন পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগকে মাঠে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এই বিশ্লেষণ তিনি শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকের পর যমুনার সামনে এক ব্রিফিংয়ে ব্যক্ত করেন।
নাহিদ ইসলাম আরও জানান, ওই বৈঠকের আগে গতকালের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তিনটি দলকে ডেকে একটি আলোচনা আয়োজন করা হয়। আলোচনায় অংশ নেওয়া নেতারা একসঙ্গে আলোচনা করে নিশ্চিত হয়েছেন, ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলবে, তবে একে অপরের বিরুদ্ধে কোনো অপ্রয়োজনীয় অপপ্রচার বা সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে যেন কোনো সুবিধা না দেওয়া হয়, এই বিষয়েও সব পক্ষ একমত।
এনসিপির নেতা আরও জানিয়ে থাকেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি গতকাল দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন নয়। এটা বোঝাচ্ছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে একটি বিষপ্রজ্বলন শুরু করেছে। তাঁরা শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, প্রশাসনিকভাবেও এই হোতা। আর তাই, আওয়ামী লীগের এই ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় আমাদের সকল দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
নাহিদ ইসলাম প্রকাশ করেন, কোর্ট পাড়ায় জামিনে থাকা ব্যক্তিদের ব্যাপারটি প্রত্যেক দলের জন্য উদ্বেগের বিষয়। আইনজীবীরা অনেকের সঙ্গে জড়িত এবং মিডিয়া হাউস ও রাজনীতি সম্পর্কিত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যা সব দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ। তিনি বলছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য তারা জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন এবং সবাই সমন্বিতভাবে সহযোগিতা করবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, সরকার আরও কঠোর হওয়ার প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা থাকার দরকার, যাতে তারা সবাইকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে। ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের এখনই গ্রেপ্তার করতে হবে। সেই সঙ্গে, যারা এই পরিকল্পনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দরকার।
নাহিদ অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ সমস্ত পরিকল্পনা Delhi-তে বসে করছে।’ তিনি বলেন, ‘ভারত সরকারের সরাসরি বা পরোক্ষ সমর্থন ছাড়া আওয়ামী লীগ এ ধরনের ষড়যন্ত্র করতে পারে না। তারা জামিন, অর্থ ও অস্ত্রের মাধ্যমে এই জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। তাই, ভারত সরকারের কাছে দাবি, তাদের এই হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে, বিশেষ করে ভারতের দূতাবাসের কর্মীদের জবাবদিহি করতে হবে। বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে ভারতের পক্ষ থেকে সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নাহিদ আরও যোগ করেন, ‘আমরা দেখেছি, ৫ আগস্টের আগে ভারত আওয়ামী লীগকে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করছিল। তারা অবৈধভাবে টিকে থাকার জন্য এই সাহায্য দেয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে তারা নীরবে চাপ সৃষ্টি করে। তাই, ভারতের কাছ থেকে এ হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ।’






















