আওয়ামী লীগ তিন দফায় ক্ষমতায় এসে মহাপাপের ইতিহাস তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ১৯৯৬-৯৯ সালের মধ্যে ও ২০০৯-২০১৩ সময়ে তারা ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষের রক্তের রাজনীতি চালিয়ে গিয়েছে, দেশের অসংখ্য প্রাণহানি ও নিপীড়নের জন্য দায়ী। সাম্প্রতিক বিজয় দিবসের সকালে যুব ম্যারাথন অনুষ্ঠানে এক বক্তৃতায় তিনি তুলে ধরেন, ১৯৮২ সালে ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগ নেতা-মন্ত্রীরা হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছিলেন, বলেছিলেন, ‘অতীতে তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে অপরাধ করেছে, আমরা বিনা শর্তে ক্ষমা চাই।’ তারা জানিয়েছিল, ‘আমরা এখন ভাল হয়ে গেছি, দেশের জন্য কিছু করতে চাই।’ সেই সময় হাতে তসবিহ and মাথা ঢেকে তারা এই আত্মপ্রসার বলেছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ তখন ভাবছিল, আওয়ামী লীগ পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু সবটাই ছিল লোক দেখানো। যখনই তারা ক্ষমতায় আসত, আগের মতোই নির্মম বুলডোজার চালাত। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে গিয়ে বলেছিলেন, যদি তাদের এক কর্মী মারা যায়, তাহলে তার বদলে দশজনকে হত্যা করতে হবে। এই হুঁশিয়ারি আর নিষ্ঠুরতা ছিল তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন দায়িত্বে’র প্রমাণ। একনায়কতন্ত্রের দেড় বছর থেকে শুরু করে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি এতই ভয়ঙ্কর ছিল যে, খালাশ, বিলে, নদীতে, সড়কে অগনিত লাশ পড়ত।
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একনায়কতন্ত্রের চেহারা ছিল এক নির্মম त्रাসদী। এ সময় মানুষ ভাবেছিল, আওয়ামী লীগ এই অন্ধকার থেকে শিক্ষা নিয়ে মুক্তি দেবে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেটা হয়নি। বরং, তারা ক্ষমতা অর্জনের জন্য নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়। ১৯৭৬ সালে তারা ক্ষমা চেয়ে আবার ক্ষমতায় আসে, এবং পরে ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসে। এই তিন দফায় বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে, গ্রামের পর গ্রাম, শহরের মোড়ে, সব জায়গায় মানুষের জীবন ঝরে পড়ে। নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠনের ঘটনা বহু। নোয়াখালীতে এক মহিলাকে আওয়ামী লীগের নোংরামি দিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়।
একাত্তরের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে esperança নিয়ে যুদ্ধ করেছিল। তারা ভাবছিল, দেশের সব বৈষম্য দূর হবে, সামাজিক ন্যায় ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শাসকগোষ্ঠীর হাতে দেশের সেই স্বপ্নের দিনগুলো দুঃখজনকভাবে শেষ হয়ে যায়।’
তিনি আরও জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী, পুলিশের পাশাপাশি রক্ষীবাহিনী গঠন হয়েছিল। মা-বোনদের ইজ্জত অস্বীকার, লুটপাট ও দুর্নীতি ছিল দুর্বার। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষে লাশের সারি জমে উঠেছিল মাঠে-ঘাটে। শ্বাসরোধ করে তারা এ দেশের ক্যানভাসকে শ্মশানে পরিণত করেছিল। এভাবে একদিন তারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও, তাদের তৎকালীন কুশাসন ও অপরাধের জন্য ইতিহাসে তাদের স্থান চিরস্থায়ী।
যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অতীতের প্রতিষ্ঠিত ভ্রান্ত রাজনীতি ও অপকর্মের ধ্বংসাবশেষ পাতা ফেলে দিয়ে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে এগোতে হবে। এর জন্য দরকার বাস্তব ও স্বাধীনতার পক্ষে প্রাঞ্জল রাজনীতি—তাতে থাকুক দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুভবুদ্ধির প্রত্যয়, চাঁদাবাজ ও রাজাকারদের প্রতিশোধ।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র আমাদের দলের বিজয় চাই না, বরং এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। যারা এই বিজয়কে বাধার চেষ্টা করবে, যুব সমাজ তাদের লাথি মারবে ও দমিয়ে দেবে।’
অবশেষে তিনি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা চাই নিরপেক্ষ ও সততাের ভিত্তিতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। যদি কোনো পক্ষের পক্ষ থেকে কিছু সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা হয়, দেখা যাবে আমরা তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করব। আমরা আমদের প্রত্যাশা, কমিশন নিজেদের শপথ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করবে।”









