শীতকালীন ইতিহাসের ভয়াবহ ঝড়ের কারণে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মানবিক সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, এবং বাস্তুচ্যুত হওয়া কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি नागरिकের জীবন আরও বিপদে পড়েছে।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবিক সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, ইসরায়েলের আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে জরুরি প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও সহায়তা সামগ্রী গাজায় প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও রাজapataরৎ, তাবু এবং কম্বলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রস্তুত ছিল সীমান্তে, তবুও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সেগুলোর প্রবেশে কঠোরতা দেখাচ্ছেন বা নানাবিধ কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে।
শীতের প্রভাবে গাজা শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঝড়ের মধ্যেই একটি বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে, যার ফলশ্রুতিতে ২ শিশুসহ মোট ছয়জন আহত হন। উদ্ধারকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করেন।
অপর দিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, মাত্র দুই সপ্তাহ বয়সী এক শিশু তীব্র শীতে মারা গেছে, যা মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রকাশ করে। অপ্রতুল আশ্রয়ে থাকা শিশু ও বৃদ্ধরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ঝড়ের কারণে গাজায় বহু আশ্রয়কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসের মুখে পড়েছে, যা ব্যক্তিগত সম্পদও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কাছাকাছি ৩০ হাজার শিশু এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এ পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে প্রভাবজনক কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
গাজা সিভিল ডিফেন্সের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘এখনকার পরিস্থিতি একটি প্রকৃত মানবিক বিপর্যয় আর ঘোর ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।’
এদিকে, যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের পরিস্থিতির মধ্যেই কাতার প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে গাজায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা, জরুরি মানবিক সহায়তা প্রবেশ and যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, শেখ মোহাম্মদ গাজায় মানবিক সহায়তা নির্বিঘ্ন ও শর্তহীনভাবে প্রবেশের জন্য গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন এবং এর স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ কাজের ওপর জোর দেন। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে।
অবশ্য, যুদ্ধবিরতি চালু থাকলেও গাজায় সহিংসতা বন্ধ হয়নি। চিকিৎসকদের রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজা শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করছে, গাজার ‘ইয়েলো লাইন’ এর কাছে একটি মর্টার শেল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়ে—এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাছাড়া, খান ইউনুসের পূর্বাঞ্চলেও ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে, যেখানে গাজা শহরের তুফ্ফাহ এলাকায় গুলিতে দুজন আহত হন।
অধিপ্ত পশ্চিম তীরেও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, কালকিলিয়ার ইসরায়েলি বাহিনী ২০ বছর বয়সী এক যুবককে পায়ে গুলি করে আহত করেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মোট ৭০ হাজার ৬৬৮ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭১ হাজার ১৫২ জন আহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয় আরও গাঢ় করে তুলছে।









