কলকাতায় লিওনেল মেসির সঙ্গে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে নানা ধরনের কটূক্তি ও কুরুচিকর মন্তব্য। এ পরিস্থিতিতে অভিনেত্রী শুভশ্রী গাঙ্গুলী সামাজিক মাধ্যমে তার পোস্টের মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তার এই ছবিটি পোস্ট করার পর থেকেই তাকে লক্ষ্য করে বিদ্রুপ ও রুচিহীন মন্তব্যের ঝড় শুরু হয়।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে মূলত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন শুভশ্রীর স্বামী, নির্মাতা ও রাজনৈতিক নেতা রাজ চক্রবর্তী। তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করে বলেছেন, একজন নারীকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের বদলে কিভাবে অপমান করা হচ্ছে, সেটি এভাবে চলতে পারে না। তিনি মনে করেন, এই সব কটূক্তির পেছনে রাজনৈতিক দিক থেকে উসকানি থাকতে পারে, তবে কে এর সঙ্গে জড়িত, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র আইনি পদক্ষেপেরই নয়, বরং গত মাসে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক সামাজিক বিতর্কেরই অবশ্যম্ভাবী ফলাফল।
১২ ডিসেম্বর কলকাতার যুবভারতীস্টেডিয়ামে ফুটবল ইতিহাসে এক বিতর্কের দিন হিসেবে চিহ্নিত হবে। হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী দর্শক দীর্ঘ অপেক্ষার পর, অর্থ খরচ করে টিকিট কেটে এসে, মেসিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাননি। গ্যালারিতে দাঙ্গা, বিশৃঙ্খলা, আর দর্শকদের উচ্ছ্বাসের মাঝে দ্রুত মাঠ ছাড়েন খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। সেই ঘটনার প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে গ্রেপ্তার করা হলেও, এর আক্রোশের কেন্দ্রে পৌঁছে যায় শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম।
প্রতিবাদে শুভশ্রী জানিয়েছিলেন, তিনি একজন অভিনেত্রী হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন, এবং মেসির সঙ্গে ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার পর বাইর থেকে নানা রকম ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও অশালীন মিমের বন্যা বয়ে যায়। তিনি বলেন, যেখানে অনেক দর্শক টাকায় অ্যাক্সেস পেয়েও দর্শকপ্রিয় খেলোয়াড়কে দেখতে পাননি, সেখানে ক্ষোভ স্বাভাবিক— কিন্তু সে ক্ষোভের লক্ষ্য কেন একজন অভিনেত্রী? এই প্রশ্নটি আজও উঠছে।
সোমবার রাজ চক্রবর্তী একটি দীর্ঘ পোস্টে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি তার লেখায় শুধু শুভশ্রীর পক্ষ থেকে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেও প্রতিবাদ জানান। রাজ লিখেছেন, যুবভারতীর অরাজকতা, অপব্যবহার ও লজ্জাজনক ঘটনা ফুটবলপ্রেমী বাঙালির জন্য ব্যথার। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এত বড় আয়োজনের পরিকল্পনায় কেন গাফিলতি রয়ে গেল? দোষীদের শাস্তি দাবি করে বলেছেন, এই ঘটনা বাঙালির আবেগে আঘাত হেনেছে।
তারপর তিনি শুভশ্রী প্রসঙ্গ তুলে বলেন, তিনি একজন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এবং সেই উপস্থিতির জন্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করেছেন, কি শুধুমাত্র অভিনেত্রী হওয়ার কারণেই কি তাকে ব্যঙ্গের শিকার হতে হয়েছে? রাজ আরো উল্লেখ করেছেন, একজনের পরিচয় শুধু পেশা নয়, তিনি মা, স্ত্রী, বন্ধু, ভক্ত, বা অভিনেত্রী— সবকিছুর ওপরে তিনি একজন মানুষ।
এছাড়া রাজ গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন যখন মাঠে বহু সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন, তখন কেন শুধুমাত্র একজন অভিনেত্রীর অভিযোগ বা ট্রোলের বিষয় হয়ে ওঠেন? রাজ মনে করেন, এই ধরনের ট্রোলিং শুধুমাত্র বর্তমানের অপমান নয়, ভবিষ্যতেও বিপজ্জনক বার্তা বহন করে। তিনি শেষত হাতে বলেন, প্রতিবাদ ও অপমানের মধ্যে পার্থক্য বোঝা জরুরি।






















