জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সম্প্রতি সভায় ২২টি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের বিভিন্ন খাতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়ন আরও এগিয়ে যাবে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর পরিকল্পনা কমিশন ভবনে একনেকের সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটি চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের সপ্তম এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৮তম সভা।
বৈঠকের শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনুমোদিত ২২টির প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬,৪১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি সম্পদায়ন হবে ৩০,৪৮২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ হিসেবে মোট ১,৬৮৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে ব্যয় হবে ১৪,২৪৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় প্রশাসনিক অবকাঠামো, শিক্ষা, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, কৃষি ও সমাজকল্যাণ খাতে নানা প্রকল্প। এর মধ্যে অন্যতম হলো কর্ণফুলী টানেল থেকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের গাছবাড়িয়া পর্যন্ত সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে।
বৈঠকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর থেকে ডুগডুগি ঘোড়াঘাট পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীও অনুমোদন পেয়েছে, যেখানে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে এখন মোট ৫৮৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
দক্ষিণে, ঢাকা কাঁচপুর থেকে সিলেট ও তামাবিল মহাসড়কের চারলেন উন্নয়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্পের মেয়াদ চতুর্থবারের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীর অনুমোদন হয়েছে, যার ব্যয় এবার ৪০৪ কোটি ৪ লাখ টাকা।
নতুন প্রকল্প হিসেবে ঢাকা ওয়াসার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি স্থাপন, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এলাকা ভিত্তিক অন্যান্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, মোংলা কমান্ডার ফ্লোটিলা অবকাঠামো উন্নয়ন, ইস্টার্ন রিফাইনারি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ, ও নার্সিং শিক্ষার উন্নয়ন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে হাজী মোহাম্মদ দনেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধনী পাস হয়েছে। সমাজকল্যাণে দুস্থ শিশুর জন্য প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
পানি সম্পদ খাতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাসহ গঙ্গা–কপোতাাক্ষী সেচ প্রকল্প, সুরমা–কুশিয়ারা নদী উন্নয়ন ও জরুরি পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার অধিদফতর অন্তর্গত জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক সম্প্রসারণ, কৃষি উন্নয়ন, আর্মি ইনস্টিটিউট অব ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশনের অবকাঠামো প্রকল্পের মতো অন্যান্য প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়।
এই যৌথ উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে অবকাঠামো, যোগাযোগ, শিক্ষা ও পরিবেশসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।


















