র্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ, মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর), দুপুরে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সঙ্গে গাজী এমএইচ তামিম, শাইখ মাহদীসহ অন্যরা। গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিদের আইনজীবীরাও এই সময় উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতে, অব্যাহতি চেয়ে করা আসামিদের আইনজীবীদের আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। এখনও গ্রেপ্তার হওয়া ও পলাতক আসামিদের নাম-পরিচয় পরিচিতি করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা হচ্ছে। অভিযোগের পরবর্তী কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সূচনা বক্তব্য, সাক্ষ্যগ্রহণ এবং অভিযোগের ন্যূনতম ২১ দিনের মধ্যে বিচার পুরোপুরি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা।
আদালত পুরো দিনটি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছিল। অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব-বিজিবি ও সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতায় আশপাশের এলাকা নিরাপদ ছিল। সকাল ১০টার পর ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন- র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সামিরুল আলম, মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরপ্রাপ্ত), র্যাবের সাবেক গোয়েন্দা পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
এ মামলায় প্রধান তিনজনসহ মোট সাতজন পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খায়রুল ইসলাম।
এই গুমের মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য নির্ধারিত ছিল ২১ ডিসেম্বর। কিন্তু আসামি পক্ষের পক্ষে শুনানির জন্য আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, যিনি পরে আগাম তারিখের জন্য বলেন। ফলত, আদালত ঐ দিন থেকে দুই দিন পিছিয়ে ২৩ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন। আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, কারণ আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সময় বিলম্বের জন্য এভাবেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে তার মন্তব্য।
আগে, ১৪ ডিসেম্বর, গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ, অন্যদিকে আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি এম হাসান ইমাম। অন্য আসামিদের জন্য আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা আনেন তাদের আইনজীবীরা। তবে, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আবার অভিযোগ গঠনের জন্য বলা হয়।
অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয় ৩ ডিসেম্বর, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের আক্ষেপের মধ্য দিয়ে। তিনি এর মধ্যে গুমের মাধ্যমে কি কী ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করত—কেউ কারাগারে পাঠানো হত, কেউ অজানা স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে গুম করে রাখা হত।’
অন্যদিকে, ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনাল হাজির করানো হয়। শুনানির পর তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। পলাতক আসামিদের জন্য প্রকাশনা ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তৎক্ষণাৎ, স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করে তাদের পক্ষের আইনজীবীর ব্যবস্থা করেন আদালত। এ মামলায়, ৮ অক্টোবর অভিযোগ দাখিলের পর, ১৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।


















