চার দেয়ালের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির কঠিন সময়গুলোতে উঠে এসেছিলেন একজন সাহসী নারী, তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। খালেদা জিয়া তার আপসহীন নেতৃত্ব, দৃঢ়তা এবং স্বীয় স্বার্থের ওপরে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মনোভাবের জন্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন, এই দুঃখজনক খবর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জেল, জুলুম, নির্যাতন—সবকিছুকেই উপেক্ষা করে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে অবিচল থাকতে তিনি কখনও পিছপা হননি। তার এই সংগ্রামী জীবনই তাকে জনসম্মুখে ‘আপসহীন নেত্রী’ নামে খ্যাতি দিয়েছে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে, এক সামরিক অভ্যুত্থানে শহীদ হন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও তখনকার রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান। এই ব্যথা ও শোকের মুহূর্তে দলটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়লেও, সেই বিপর্যয় মোকাবেলা করে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন খালেদা জিয়া। স্বামীর শূন্যতা দৃষ্টিতে নিয়ে তিনি দায়িত্ব নেন একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের জন্মদান ও উন্নয়ন।
অতঃপর, ১৯৮১ সাল থেকে তিনি দলকে পুনর্গঠনে কাজ শুরু করেন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপসহীন দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করেন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। শহীদ জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথই তারা ধরে এগিয়ে যান, যেখানে কোনও আপসের স্থান নেই।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, খালেদা জিয়ার দৃঢ়তা এবং সাহসের কারণে ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদের পতন সাধিত হয়। এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারি ছিলেন তিনি। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এই অর্জন তাকে ইতিহাসের পাতায় অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
খালেদা জিয়া দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয়তাবাদ এবং স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন অটুট। ভয় বা লোভের কাছে কখনও হস্তান্তর হননি। দীর্ঘ সময়কার কারাবরণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও কঠিন অসুস্থতার সময়েও তিনি দেশের জন্য তার আদর্শের লড়াই চালিয়ে গেছেন। গণতন্ত্রের জন্য তার আত্মদান সাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের প্রশ্নে তার অবিচল ও দৃঢ়চেতা মনোভাবকে আরও স্পষ্ট করে দেয়। তার জীবন আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস, তিনি সত্যিই বাংলাদেশের রাজনীতির এক অবিস্মরণীয় নেত্রী।






















