দেশব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নির্যাতন বাড়ি ঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এবার নেত্রকোনার রাজন্দ্রপুরে জমি বিক্রয়ের পর এক হিন্দু পরিবারকে জমির মালিকানা হস্তান্তর না করে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। জমিটি ক্রয় করার পর প্রায় দুই বছর পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এখনো জমিটি দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করতে পারেনি এই সংখ্যালঘু পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় সঞ্জিত বর্মন নামের এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি বিগত ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে মোঃ সিদ্দিক মিয়া নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছ থেকে নেত্রকোনার রাজন্দ্রপুরে দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে মোট ৫৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। কিন্তু জমিটি ক্রয় করার পরও সঞ্জিত বর্মনকে তাৎক্ষনিক ভাবে জমির দখল বুঝিয়ে না দিয়ে সময় অযথা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে থাকে। এবং এভাবে জমি ক্রয়ের ঘটনার প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর যখন জমির নতুন মালিক সঞ্জিত বর্মন জমির দখলদারিত্ব নেওয়ার জন্য তাগাদা দেয় তখন মোঃ সিদ্দিক মিয়া ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা উল্টো দুই লক্ষ চাঁদা দাবি করে এবং এই চাঁদা না দিলে জমির দখল দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
এই বিষয়ে সঞ্জিত বর্মন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, “আমরা খুবই সাধারণ পরিবারের মানুষ। কষ্ট করে টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার ছোট ভাই শিপলু বর্মন যুক্তরাজ্যে থাকে এবং দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে সঞ্চয় করে এই জমি ক্রয় করার জন্য দুই লক্ষ টাকা জোগাড় করে দেয়। আমাদের পরিবারের স্বপ্ন ছিল নিজস্ব একটি ভিটে করার। এ কারনেই ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মোঃ সিদ্দিক মিয়ার কাছ থেকে ৫৬ শতাংশের এই জায়গাটি আমরা ক্রয় করি। কিন্তু আজ প্রায় দুই বছর হয়ে গেলো এখনো জমির দখল পেলাম না। জমিটির দখল আমাদেরকে হস্তান্তর করার জন্য চাপ দিতে গেলে উল্টো আমাদের কাছ থেকে আরও দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে মোঃ সিদ্দিক মিয়া ও তাঁর সহযোগী আওয়লাদ মিয়া। অনেক অনুনয় বিনয় করার পরও জমিটি আমাদেরকে হস্তান্তর করছে না। প্রশাসনের কাছে বিচারও চেয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ফয়সালা হয়নি। হিন্দু পরিবারের ছেলে বলেই কি আমাদের আজ এই পরিণতি?”
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মহবুবউল মজিদ, রাজেন্দ্রপুর গ্রামের মেম্বার ফিরোজ আলী ও উনার ছেলে এনামূল হক সম্রাট, কালা মিয়া, উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা জহিরুল হক আকন্দ সহ আরও বেশ কয়েক জন আওয়ামীলীগ নেতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে মোঃ সিদ্দিক মিয়ার। এবং সেই সূত্র ধরে মোঃ সিদ্দিক মিয়া স্থানীয়ভাবে খুব প্রভাবশালী।
সঞ্জিত বর্মন-এর প্রতিবেশী অরিন্দম সরকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, “সঞ্জিত ও তাদের পরিবারের সাথে প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের সাথে খুব সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক। তারা খুব সাধারণ পরিবারের মানুষ। কিন্তু টাকা দিয়ে জমি কেনার পরও জমির দখলদারিত্ব পাচ্ছেন না। উপরন্তু আরও দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করছে এবং স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা নানান ভাবে হুমকি ধামকিও দিয়েছে। সংখ্যালঘু হওয়ার কারনে আমরা সমাজে নানান ধরনের লাঞ্ছনার শিকার হই। এটি তাঁরই একটি উদাহরণ। আমরা প্রায়ই ভাবি এই দেশে থেকে আমরা আসলে কি পেলাম? প্রতিদিন ধুঁকে ধুঁকে মারা যাওয়ার চেয়ে ভারতে বা অন্য কোন দেশে চলে যেতে পারলেই মনে হয় বেঁচে যাবো। কিন্তু তারপরও তো নিজের দেশের মায়া ত্যাগ করা যায়না। জানিনা আর কত দুর্ভোগ পোহাতে হবে!”
মোঃ সিদ্দিক মিয়ার সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হোলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা থানার ডিউটি অফিসার এসএম আশরাফুল আলমের সাথে কথা বললে তিনি জমি বিষয়ক কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমরা তদন্ত চলছে। সুতরাং এই মুহূর্তে আপনাদের কিছু বলতে পারছিনা।”