সম্প্রতি বাংলাদেশ যেন পরিণত হয়েছে এক গুমের দেশ হিসেবে। শুধু রাজনৈতিক মতভেদের কারনে সারাদেশে একের পর এক গুমের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসকল গুমের ঘটনায় সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে বেড়ে চলেছে আতঙ্ক। ক্ষমতাসীন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের চিন্তা ও চেতনার বাইরে গেলেই যেন এইসব গুম আর তার পরবর্তী খুনের ঘটনা কিংবা ঘরে আর ফিরে না আসা নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানী ঢাকার বনানীর বাসায় ফেরার পথে ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আনসার আলীসহ ‘গুম’ হন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী।তিনি সিলেটের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। এ ঘটনায় হরতাল-অবরোধসহ দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইলিয়াস আলীর সন্ধানের আবেদন জানায় তার পরিবার। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী সন্তানদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা আমিও বুঝি’। এসময় প্রধানমন্ত্রী রাজনীতির ঊর্ধ্বে মানবতা উল্লেখ করে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো প্রতিফলন ঘটেনি সেই মানবতার। দীর্ঘ চার বছর পেরিয়ে গেলেও ইলিয়াস আলীর সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ এ বিএনপি নেতার ভাগ্যে আসলে কি জুটেছে এখনও জানতে পারেনি পরিবার। প্রিয়জনের এমন গুম হওয়ার ঘটনায় এখনও কাঁদছে ইলিয়াস আলীর গর্ভধারিণী মা, স্ত্রী, সন্তান ও ঘনিষ্ঠজনরা।
এর আগে ২০১২ সালের ১ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরা থেকে দলীয় কর্মী জুনেদ আহমদসহ নিখোঁজ হন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার। মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে ঢাকায় যাওয়া ছাত্রদলের এই তুখোড় নেতার আর খোঁজ মেলেনি। বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাদের মতো হারিয়ে গেছেন ছাত্রলীগ নেতা বকুল খানও! হবিগঞ্জের মাধবপুরের বহরা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের এই সভাপতি গত বছরের ১৪ মার্চ নিখোঁজ হন।
এ ঘটনার ঠিক ১ বছর ৪ মাসের মাথায় একই কায়দায় ঢাকার লালবাগ নিবাসী যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি কর্মী ও ব্লগার মোহাম্মদ কাশিফ রেহানকে গত ৯ অগাস্ট অজ্ঞাতনামধারী কিছু ব্যাক্তি উঠিয়ে নিয়ে যায় তাঁরই বাসা থেকে। এরপর থেকে তাঁর সন্ধান মিলছে না। পরিবারের অভিযোগ, গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে গেছে। এই ব্যাপারে রেহানের বাবা মোহাম্মদ আসলাম আমাদের জাগো বাংলা টুয়েন্টিফোর প্রতিনিধির কাছে অভিযোগ করে বলেন “আমার ছেলেকে আমার চোখের সামনে দিয়ে আমার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে ওরা। আমাদের দেশ একটা মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে।এইজন্যেই কি দেশ স্বাধীন হয়েছিলো?”। এদিকে ছেলের গুম হয়ে যাওয়ার বিষয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না রেহানের মা। তিনি ছেলের হারিয়ে যাওয়ার শোকে বার বার কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। তিনি আহাজারি করে বল্যতে থাকেন “আমার ছেলেকে আপনারা ফিরিয়ে দিন”।
পাশে বসা রেহান কাশেফের প্রতিবেশী মোখলেস রহমান বলেন , আমরা আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করি যে রেহানকে যেন তারা ফিরিয়ে দেয়”। এ সময় তিনি সন্দেহ পোষন করে বলেন যে রেহান বি এন পি’র পক্ষে অনলাইনে প্রতিবাদ ও নানাবিধ লেখালেখির মাধ্যমে বেশ বড় ভূমিকা রাখছিলো।
নিখোঁজ কাশিফ রেহানের মা এ সময় বলেন “বি এন পি’র পক্ষে ও আওয়ামীলীগের বিপক্ষে প্রতিবাদ করাতেই রেহানকে সরকারের সন্ত্রাসীরা উঠিয়ে নিয়ে গেছে।” কাঁদতে কাঁদতে এ কথাই কেবল বলছিলেন।
তাঁর এই হারিয়ে যাওয়াকে ইলিয়াস আলী গুমের সঙ্গে তুলনা করছেন বিএনপি নেতারা। শুধু ইলিয়াস আলী, কাশিফ রেহান, দিনার, বকুল বা হাবিবুর রহমান ও ডা. রুকন উদ্দিনই নয়, গত পাঁচ বছরে রহস্যজনকভাবে সারাদেশে নিখোঁজ হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের মধ্যে যেমন রাজনীতিবিদ রয়েছেন, তেমনি ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ; এমনকি নারী এবং শিশুও আছে এ তালিকায়। গুম, অপহরণ ও নিখোঁজ মানুষের তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। নিখোঁজের পর পর তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। অপোর প্রহরও শেষ হচ্ছে না নিখোঁজ হওয়া লোকজনের স্বজনদের।
এই ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবার জন্য বলেন এবং এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলবেন না বলে এই প্রতিবেদক কে সাফ জানিয়ে দেন।