আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহায়তায় গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের ত্রুটি শনাক্ত করা যায় ভালোভাবেই। পাশ্চাত্যে এ ধরনের ত্রুটি শনাক্তের পর গর্ভপাতের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। জন্মত্রুটিজনিত গর্ভপাতের সমালোচনা করতে গিয়ে ভ্যাটিকান পোপ ফ্রান্সিস একে নাৎসিদের জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা গেছে।
গর্ভাবস্থায় বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর জন্মত্রুটি শনাক্ত করা হয়ে থাকে যেন গর্ভপাতের মধ্য দিয়ে ত্রুটিযুক্ত শিশুর জন্ম ঠেকানো যায়। শনিবার (১৬ জুন) কনফেডারেশন অব ইতালিয়ান ফ্যামিলি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে জন্মত্রুটিজনিত গর্ভপাতের সঙ্গে নাৎসিদের শুদ্ধি অভিযানের তুলনা করেন ফ্রান্সিস। তার মতে, দুর্বলদের বিনাশের মধ্য দিয়ে নাৎসিরা যে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছিল, এটি তারই সমতুল্য। পোপ বলেন, ‘শিশুরা যেভাবে পৃথিবীতে আসে, ঈশ্বর যেভাবে তাদের পাঠান, ঈশ্বর যেভাবে তাদেরকে অনুমোদন করেন, তাদেরকে সেভাবেই আমাদের গ্রহণ করা উচিত; এমনকি তারা যদি অসুস্থ হয়, তখনও।
বর্ণবাদী ইহুদি বিদ্বেষকে প্রচারণার মূল অস্ত্র বানিয়ে হিটলার জার্মানিতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন জাত্যাভিমান। জার্মান জনগণ সে সময় নর্ডিক জাতি হিসেবে পরিচিতিপ্রাপ্ত হয় এবং নিজেদের আর্য জাতির বিশুদ্ধ উত্তরসূরি হিসেবে ভাবতে শুরু করে। ৩০ এর দশকে নাৎসি শাসনামলে ‘সুপ্রজনন কর্মসূচি’র আওতায় ইহুদি এবং অন্যান্য সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর কয়েক লাখ মানুষের জোরপূর্বক প্রজনন সক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী প্রজন্মে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম রোধে লাখো মানুষকে হত্যাও করা হয়েছিল সে সময়।
জন্ম পূর্ববর্তী ভ্রুণের ত্রুটি শনাক্তকরণ পরীক্ষা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ফ্রান্সিস প্রশ্ন তোলেন, ‘এক্ষেত্রে প্রথম কথা হলো শিশু হত্যার সংস্কৃতির অবসান প্রয়োজন কিনা।’ অপেক্ষাকৃত নিরুদ্বেগ জীবনের জন্য অবুঝ শিশুদের যেনতেনভাবে শেষ করে দেওয়া উচিত কিনা সেই প্রশ্নও তোলেন পোপ। বলেন, ‘আমি মর্মাহত হয়ে বলছি, গত শতাব্দীতে নাৎসিদের জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্ব কলঙ্কিত হয়েছে। আজ, আমরা বিশেষ সুরক্ষার নামে একই কাজ করছি।’