একক দেশ হিসেবে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে ইইউ জোট হিসাবে নিলে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।
সব মিলিয়ে গত বছর বিশ্বের মোট রফতানিকৃত পোশাকের ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাংলাদেশের। ২০১৬ সালে যা ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। চীন পোশাক রফতানিতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্টাটিসটিক্স রিভিউ ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। সম্প্র্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে গত বছর ২ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়। পোশাক রফতানিতে বরাবরের মতো শীর্ষ অবস্থানে আছে চীন। দেশটি গত বছর ১৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে।
বিশ্বের মোট পোশাক রফতানির ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ চীনের দখলে। তবে গেল বছর পোশাক রফতানি ৭ শতাংশ কমে গেছে চীনের। দ্বিতীয় বাংলাদেশ। তৃতীয় শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনাম গত বছর ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। তাদের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত গত বছর ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে।
বৈশ্বিক বাজারে তাদের হিস্যা ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। দেশটির অবস্থান চতুর্থ। বৈশ্বিক বাজারের ৩ দশমিক ৩ শতাংশ অংশ নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে তুরস্ক। এর বাইরে ২৮ দেশের জোট ইইউ গত বছর রফতানি করেছে ১১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পোশাক।
ডব্লিউটিও বলছে, শীর্ষ দশ রফতানিকারক দেশ গত বছর ৪৫ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। বৈশ্বিক মোট পোশাক রফতানির চার ভাগের তিন ভাগই এই শীর্ষ দশ দেশের দখলে রয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক বাজারে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে টপকে যাচ্ছে প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের চেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে দেশটির বাজার দখল। সাত বছর আগে যেখানে দেশটির রফতানি বাজারে দখল ছিল মাত্র দশমিক ৯ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় আজ সেখানে রফতানি আয়ে বাজার দখল হয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
অন্যদিকে ৭ বছর আগে বৈশ্বিক বাজারে পোশাক রফতানি আয়ে বাংলাদেশের দখল ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। আর আজ বাংলাদেশের রফতানি আয়ের বাজার বেড়ে মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
উল্লিখিত সময়ে বাংলাদেশ পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলেও ভিয়েতনামের মতো দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধি দেখাতে পারেনি। ফলে পোশাক রফতানি আয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের জন্য চরম ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে পোশাক রফতানি আয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম। পোশাক রফতানিতে এমন প্রবৃদ্ধি চলতে থাকলে খুব শিগগির দেশটি বাংলাদেশকে টপকে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ডব্লিউটিওর সর্বশেষ পরিসংখ্যান।
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ক্রেতা দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পোশাকের বাজার পুরোটাই দখলে নিয়ে নিচ্ছে ভিয়েতনাম। কারণ দেশটিতে চীন, জাপান ও কোরিয়ার অনেক বিনিয়োগকারী আছেন।
দেশটির কারখানাগুলোয় উন্নত প্রযুক্তির মেশিন আছে, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতাও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। চীন ও ভিয়েতনামের সীমান্ত এক। সহজেই কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারে তারা। বাংলাদেশের চেয়ে লিড টাইম অনেক কম।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পোশাক শিল্পে আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল; তবে এ খাতের উন্নয়নে আমাদের আরও বেশি কাজ করতে হবে। সড়ক ও মহাসড়ক, বিমান পরিবহন ও চট্টগ্রামের সমুদ্রবন্দরের আরও উন্নয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এসব উন্নয়নের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো এবং ব্যবসা করার খরচ কমানো সম্ভব হবে। এভাবে আমরা এ খাতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম, তুরস্ক, ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারব।