বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা ও সংগঠনের পদধারী শিক্ষকদের রক্ষা করতে নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই নিম্নস্তরের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক, খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। শিক্ষকদের দাবি, মোঃ মফিজুর রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীযূষ কান্তি রায়, যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক অবনী মোহন বসু, এবং দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মকে নিয়ে শিক্ষা অফিসকে আওয়ামী লীগের অফিসে রূপান্তর করেন। তবে বর্তমানে তিনি নিজেকে অন্য দলের সমর্থক বলে দাবি করছেন।আজ রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বিভিন্ন শিক্ষক এই তথ্যগুলো সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেছেন।
অভিযোগপত্রে জানা গেছে, চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মা কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগের পর ঐ বিদ্যালয়ের বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন। সরকারের পতনের পরে, গত বছর অক্টোবর মাসে শিক্ষকদের একটি নিরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে তদন্তে জানা যায় প্রধান শিক্ষক বিধান কুমার ব্রহ্ম্ম মোট ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এরপর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্থানীয় শিক্ষকরা ডিসেম্বর মাসে অভিযোগ দায়ের করেন। প্রশাসন তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী টাকা পরিশোধের জন্য তদন্ত চালানোর জন্য বলে। কিন্তু নানা বাধার মুখে তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। শিক্ষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, তারা বারবার আবেদন করার পরও কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অবশেষে, শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তারা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার বা উপজেলা সমবায় অফিসারকে তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করেন। সেই অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোসাঃ কামরুন্নেছা বদলী হয়ে গেলে, অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোঃ মফিজুর রহমান। তিনি বিগত দলীয় সরকারের সময় প্রায় ছয় বছর ওই এলাকার শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির আখড়ায় রূপান্তর করেন বলে অভিযোগ।
বিষয়টি এক সময় তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল আইনে শৃঙ্খলা সভায় উত্থাপন করেন। পরে তিনি বদলি হয়ে যান। শিক্ষকদের দাবি, তিনি আবারও চিতলমারীতে যোগদানের পর থেকে প্রধান শিক্ষকসহ কিছু অসাধু আওয়ামী লীগ নেতা দ্বারা পক্ষপাতিত্ব করে আসছেন।
কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও আবেদনকারী প্রভাত কুমার মজুদার আঁচ করেছেন, মোঃ মফিজুর রহমান তাঁর আসার পর থেকেই রাজনৈতিক দোসরদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, যোগদানের পর থেকে তিনি কোনও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেননি, যা সন্দেহজনক। একদিকে তিনি বাজে হুমকি-ধামকি দিয়ে শিক্ষকদের পিষে ফেলছেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মকে বিভিন্ন বার ফোন দিলেও তিনি যোগাযোগ করেননি। মোড়লহাটের সরকারি সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মোঃ মফিজুর রহমান। তিনি জানান, আমি একজন সাধারণ মাধ্যমিক কর্মকর্তা, অন্য কিছু নয়। এরপর, খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান বলেছেন, ‘শিক্ষকদের করা দরখাস্ত নেবার পর, আমরা যে কোনও দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। দুর্নীতির জন্য কেউ ছাড় পাবে না।’