গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে এক রিকশাচালক আজিজুর রহমান গণপিটুনির শিকার হন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে জনতার রোষের মুখে পড়েন। জনতা তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
এর এক দিন পরে, ১৬ আগস্ট শনিবার, ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত জেনিফার জেরিনের আদালত তাকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এই ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আজিজুর রহমানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
অভিনেত্রী বাঁধন নিজের ফেসবুকে এই ঘটনার বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে লিখেছেন, ‘আপনাদের কে এত অধিকার দিয়েছে মানুষের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ন্ত্রণ করার? শেখ হাসিনার মতো আচরণ করার চেষ্টা করবেন না— দেখেছেন তো শেষ পর্যন্ত তাঁর কী পরিণতি হয়েছে? তাঁর পতনের পরে ভাবতাম মানুষ এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই একই আচরণ আজও চলমান।
তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘তোমরা বলো, কারা, কাকে সমর্থন করবে বা করবে না? তোমাদের কারও উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। মানুষের নিজের বিবেক আর বিচার-বুদ্ধি আছে। যদি কেউ শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে চায়, সেটি তার নিজস্ব অধিকার। আরও বললেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তোমাদের নেই। কারো শ্রদ্ধা জানানোকে ‘ভুল’ বলে সমালোচনা করবেন না। নিজের মতের সঙ্গে যদি মিল না হয়, সেটা নিয়ে তাদের খারাপ বলার কোন অপেক্ষা নেই।’
বাঁধন আরও মন্তব্য করেছেন, ‘একটু ভাবুন—তোমাদের সহজ তথাকথিত মানসিকতা দেখে হাসি আসে। এক সময় গুজব রটেছিল, আমি জুলাই বিদ্রোহের সময় ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ২০০ কোটি টাকা পেয়েছি। এখন শোনা যাচ্ছে, আমি মাত্র ২০,০০০ টাকার জন্য শেখ মুজিবকে নিয়ে পোস্ট করছি। কী হাস্যকর! ২০০ কোটি থেকে মাত্র ২০ হাজার? সত্যিই কি কেউ এত ঝুঁকি নেয়এমন ছোট framed সুযোগের জন্য?’
তিনি বললেন, ‘আসলে এখন খুব স্পষ্ট হয়ে গেছে, মিথ্যা গুজব, সস্তা প্রচারে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বিশ্বায়নের এ যুগে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় মানুষ সবকিছু বুঝে ফেলেছে। একজন প্রকৃত নেতা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চান না, বরং অনুপ্রাণিত করেন। তারা গুজব ছড়ায় না, বিশ্বাস গড়ে তোলে।
অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘ক্ষমতার মোহে বিভোর না হয়ে আসুন চিন্তা করি, এখনো মানুষকে অন্ধকারে রাখা সম্ভব নয়। সময় বদলে গেছে, মানুষ সচেতন। আপনাদের নাটক তারা বুঝে গেছে। একজন সত্যিকার নেতা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, নিয়ন্ত্রণ করে না। তুমি গুজব ছড়াও না, বিশ্বাস তৈরি করো।
সবশেষে, বাঁধন চতুর্মুখে সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘ক্ষমতার মোহে থাকবেন না। বুঝুন, এখনো মানুষকে মোক্ষমভাবে নাড়িয়ে-চাড়িয়ে চালানো সম্ভব নয়। সেই যুগ শেষ, এখন জেগে উঠার সময়। নয়তো ইতিহাস আরও কঠোরভাবে আপনাকে শিখাবে।
অবশেষে তিনি সবার জন্য এক বার্তা দেন, ‘একজন সত্যিকারের নেতা ও মানবিক মানুষ হন। নইলে, আপনি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার মতো ব্যর্থ প্রতিলিপি হয়ে উঠবেন। বিশ্বাস করুন, সেই ট্র্যাজেডির দ্বিতীয় পর্ব অবশ্যই এড়ানো উচিত।’