জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা আজ পদত্যাগ করেছেন। এ ঘোষণা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন মূলত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বাধীন জোটের বিপর্যয়ের পর। নির্বাচন শেষে জাপানের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জোট সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়, যা দলের মধ্যে ব্যাপক চাপ তৈরি করে। অনেক নেতাই তখনই ইশিবাকে পদত্যাগের জন্য প্রাথমিক দাবি জানায়, যদিও তিনি প্রথমে সেটিকে মানতে চাননি। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা শুল্ক চুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে চান। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল ও পার্লামেন্টে জোটের পতনের কারণে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়তে থাকায় অবশেষে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। গত বছর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মূলত তাঁর নেতৃত্বে জাপানের বিভিন্ন নির্বাচনে দল বারবার হেরেছে। এর ফলে, পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই তাঁর জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভেঙে পড়ে এবং নিম্নকক্ষের ভোটে দল ও জোট সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়। ভোটারদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে অধিক উদ্বেগের ফলে জনমত ক্ষোভে রূপ নেয়, যা তাঁর সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক দল ও ডানপন্থী নেতাদের পক্ষ থেকে তাঁকে পদত্যাগের জন্য চাপ বাড়তে থাকে। শনিবার রাতে, ইশিবার সঙ্গে তার দলীয় নেতারা বৈঠক করে তাকে পদত্যাগে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। যদিও, এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে ইশিবার ঘোষণা আসার কথা রয়েছে চলমান পরিস্থিতিতে। আগামী দিনগুলোয় নতুন নেতা হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে রক্ষণশীল নেতা সানায়ে তাকাইচি, যিনি গত বছর দলের শীর্ষ পদে নির্বাচিত হন, এবং বর্তমান কৃষিমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে জাপানের রাজনীতিতে সক্রিয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ইশিবার পদত্যাগ অনিবার্য ছিল। তাদের মধ্যে কোইজুমি বড় ধরনের পরিবর্তন আনবেন না বলেই প্রত্যাশা হলেও, তাকাইচির দৃষ্টিভঙ্গি দেশের অর্থনীতি ও অর্থব্যবস্থায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে পারে। অন্য দিকে, যুক্তরাষ্ট্রে এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে। গত বৃহস্পতিবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জাপানি গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ২৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দিয়েছেন, যা জুলাইয়ের চুক্তির অংশ। তবে, টোকিওর শুল্ক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই বাণিজ্য চুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়নি কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টরসের ওপর শুল্ক সংক্রান্ত কয়েকটি আদেশ এখনো জারি করেনি। এই পরিস্থিতিতে নতুন চুক্তির কার্যকারিতা এবং তার প্রভাব এখনো ঝুঁকি বহন করছে।