আরব এবং মুসলিম দেশের আকাশপথে অবরোধ যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ইসরাইলের অর্থনীতির জন্য ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা আল হাবতুর রিসার্চ সেন্টারের এক প্রতিবেদনে। জানা গেছে, কাতার দোহার মধ্যে এই গবেষণা চালানো হয়, যা ইসরাইলি হামলার পরপরই প্রকাশিত হয়।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং আরব লীগে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো সহজাতভাবে ইসরাইলের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়, তবে তেল আবিবের অর্থনৈতিক অবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। মিডলইস্ট আই এক প্রতিবেদনে এই খবর প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাতার দোহার মধ্যে ইসরাইলের সামরিক হামলার পর গত সপ্তাহে ওআইসি’র ৫৭টি দেশ এবং আরব লীগের যৌথ জরুরি বৈঠক হয়। সেই সময় মুসলিম বিশ্বনের নেতা ও কর্মকর্তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধের পথ খুঁজে বের করেন। এই হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হন, যার মধ্যে কাতারের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাও ছিলেন।
আল হাবতুরের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি মুসলিম দেশগুলো একজোট হয়ে ইসরাইলের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়, তবে ইসরাইলের জিডিপি ৫.৭ শতাংশ থেকে কমে ৪.৮ শতাংশে নেমে আসবে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক মন্দার পথ প্রশস্ত হবে। עוד বলা হয়েছে, তুরস্ক, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো ওআইসি-ভুক্ত দেশগুলো যদি ইসরাইলের সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়, তবে এশিয়া ও আফ্রিকার উচ্চ প্রবৃদ্ধির বাজারে বড় ধরণের বাধা সেটি হয়ে দাঁড়াবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত হয়, আকাশসীমা বন্ধ হলে ইসরাইলি বিমান পরিবহনগুলোর জন্য অতিরিক্ত চার থেকে ছয় ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লাগবে, যার ফলে প্রতি ফ্লাইটে অন্তত ৩০ হাজার থেকে ৭০ হাজার ডলার অতিরিক্ত খরচ হবে। এর ফলে ইসরাইলের বিমান সংস্থা এল আলের রাজস্ব বড় ধরনের ভাটা পড়বে, সম্ভবত ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ রাজস্ব হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।
এছাড়া, এই পদক্ষেপগুলো ইসরাইলের পর্যটন শিল্প, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও মূল্যবান রতœ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তি বাতিল ও গবেষণা-উন্নয়ন উদ্যোগেও বিরূপ প্রভাব পড়বে। ইরান, সিরিয়া ও অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে নতুন প্রতিরোধমূলক সিদ্ধান্তের জন্ম দিতে পারে এই প্রভাব। এটি পুরো অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি ও কূটনৈতিক পরিস্থিতিকে বদলে দিতে সক্ষম।
আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, কাতারসহ অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও, ইসরাইলের হামলা রুখতে ওয়াশিংটনের ব্যর্থতা এই সম্পর্কের গভীরতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। এতে দেখা যায়, কাতারে অতিরিক্ত ৮ হাজারের বেশি মার্কিন সৈন্য থাকা সত্ত্বেও, সেখানে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর কিছু করতে পারেনি আমেরিকা। ফলে কৌশলগত অংশীদারিত্বের স্থিতি এখন সংকটের মুখে।
আল হাবতুরের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মুসলিম এবং আরব দেশগুলো যদি collectively ইসরাইলের আকাশসীমা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা মধ্যপ্রাচ্য এবং পুরো অঞ্চলকে নতুন প্রতিরক্ষা কৌশলের দিকে ধাবিত করবে। এর ফলে কূটনৈতিক সংটকের মাত্রা বাড়বে এবং আল-আকসা সমস্যা নিয়ে বিশ্বজনমতও প্রভাবিত হবে।
অন্যদিকে, ইতোমধ্যে ইসরাইলের একাকিত্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শেষ বক্তব্যে। তিনি বলেন, বিশ্ব মঞ্চে অন্তত এখন খুব একটা সঙ্গ নেই ইসরাইলের, এবং দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন সুবিধামতো নয়। ফলে, এই পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের নিঃসঙ্গতা মানিয়ে নিতে হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি। এই সমস্ত প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যৎ কী হবে সেটিই এখন বিশ্বের সঙ্গে সবার চোখের নজড়ে রয়েছে।