কলকাতা হাইকোর্ট বাংলাদেশের সন্দেহে পুশব্যাক করা ছয় ভারতীয় নাগরিককে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশনা জারি করে বলেছে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বীরভূম জেলার দুটি পরিবার থেকে ছয় সদস্যকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা জরুরি। এই মধ্যে একজন নারী, সোনালি বিবি, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রয়েছেন।
সোনালি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির রোহিণীতে গৃহপরিচারিকার কাজ এবং কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ করতেন। পরিবারটির অভিযোগ, জুন মাসে দিল্লি পুলিশ তাদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে নিছে এবং পরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। ঘটনার পর এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয়, যেখানে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ওই ছয়জনকে ফেরত আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার এই নির্দেশের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদন জমা পড়লেও আদালত তা নাকচ করে দেয়। আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই ছয়জনের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণিত এবং তাদের দেশে ফেরানোর দায়িত্ব সরকারের। তবে কেন্দ্রের আইনজীবীরা এই মামলার গ্রহণযোগ্যতাকে স্বেচ্ছায় প্রশ্নের মুখে ফেলে বলে অভিযোগ করেছেন, কারণ এই ঘটনা দিল্লির, কলকাতা হাইকোর্টের এখতিয়ার নেই বলে দাবি করেন তারা।
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তীর বক্তব্য, এই মুহূর্তে মামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রাখা হয়েছে এবং তাই মামলাটি গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে, দিল্লি পুলিশ বলেছে, সোনালির পরিবার এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে জানায়নি যে ওরা বাংলাদেশি নয়।
বিচারপতি চক্রবর্তী এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “আটকের নির্দেশে লেখা আছে, ওঁরা বাঙালি বস্তি থেকে আনা হয়েছে। তাহলে কি সত্যি ওরা বাংলাদেশি?” তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২৬ জুন সোনালিকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, অথচ মাত্র দুই দিনে কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়।
আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী অন্তত ৩০ দিন তদন্তের জন্য আটক রাখা উচিত। কিন্তু সোনালিকে এত তাড়াতাড়ি ২৬ জুন বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, ফলে কীভাবে এই নির্ধারণ করা হলো যে ওরা বাংলাদেশি, তা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেন আদালত। আদালত আরও বলেন, দেশের বাইরে বহিষ্কার করার আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি জমা না থাকায় আবার পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজন নেই। এই পরিস্থিতিতে আদালত ছয়জনের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করেন।