লাদাখে সম্প্রতি আরেকটি মর্যাদার দাবিতে সহিংস বিক্ষোভের দুই দিন পর ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুক্রবার প্রবীণ আন্দোলনকারী ওয়াংচুককে গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনার ফলে পুলিশ গুলিতে চারজন নিহত ও প্রায় ৯০ জন আহত হন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমএইচএ) সরাসরি ওয়াংচুককে এই অস্থিরতার জন্য দায়ী করেছে। গ্রেফতারের এক দিন আগে, ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের নিবন্ধনের জন্য প্রদত্ত ‘ফোর্সরুলেশন অ্যাক্ট’ বা এফসিআরএ (২০১০) এর অধীনে ওয়াংচুকের অলাভজনক সংস্থা ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ’ (এসইসিএমওএল) এর নিবন্ধন বাতিল করে দেয় ভারত সরকার। এই সহিংসতার জন্য তিনি নিজের কারাবাসের আহ্বান জানান, যা তিনি মনে করেন সরকারের জন্য আরও বেশি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ওয়াংচুক এই ঘটনায় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘বলির পাঁঠা কৌশল’ প্রয়োগের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ তোলেন। তিনি আরও বলেন, তিনি জেলে যেতে প্রস্তুত, তবে জেল খাটলে হয়তো তাদের জন্য আরও বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি দেখছি তারা আমাকে জননিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইনের আওতায় নিয়ে এসে দুই বছরের জন্য জেলে পাঠানোর জন্য পরিকল্পনা করছে।’ ওয়াংচুক বলেন, তিনি জেলে যেতেও প্রস্তুত, তবে সেটি তাদের জন্য অশান্তি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই এ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘আমার বা অন্যদের দ্বারা সহিংসতা উসকে দেওয়া হয়েছে—এমন কিছু বলা হলে সেটি মূল সমস্যার দিকে লক্ষ্য না রেখে বলির পাঁঠা খুঁজে বের করার চেষ্টা হয়, যা কোনও সমাধানে নিয়ে যায় না।’ তিনি এই সংঘর্ষের পেছনের মূল কারণ হিসেবে দীর্ঘদিনের ক্ষোভকে দেখান। মূলত, এই অঞ্চলের যুবকদের মধ্যে হতাশা থেকেই আন্দোলন শুরু হয়েছে—সপ্তর্ষি বছরের বেকারত্ব ও প্রত্যাশিত প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ার ক্ষোভই ছিল এর প্রধান কারণ। ওয়াংচুক বলেন, সরকার আংশিক চাকরির শুন্ট রক্ষা করে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে। লাদাখের মর্যাদা, আদিবাসীর স্বকীয়তা ও পরিবেশ রক্ষার জন্য ষষ্ঠ তফশিলের সম্প্রসারণের দাবিগুলো দীর্ঘদিন থেকে অমীমাংসিত থেকে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বলির পাঁঠা কৌশল’ ব্যবহার করে সরকার শান্তির জন্য কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না, বরং মূল দাবিগুলি চাপা দিয়ে পরিস্থিতিকে 더욱 খারাপ করে তুলছে। সংঘর্ষের পর লেহ ও কার্গিলে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পুলিশের বিভিন্ন এফআইআর দায়ের ও বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের এই ঘটনায় বিজেপি কার্যালয়, হিল কাউন্সিল ভবন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। জানা গেছে, হামলায় পেট্রোল বোমাও ব্যবহার করা হয়েছে। এই ঘটনার ফলে গুলিতে নিহত হন চারজন বেসামরিক ব্যক্তি—সেওয়াং থারচিন (৪৬), অবসরপ্রাপ্ত লাদাখ স্কাউটসের সদস্য স্টানজিন নামগয়াল (২৪), জিগমেত দোরজে এবং রিনচেন দাদুল (২১)। তাদের মরদেহ বৃহস্পতিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০ জনের বেশি, যাদের মধ্যে সাতজন গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত, আর ২০ জন বড় মানসিক আঘাতের শিকার। গুরুতর আহত একজনের চিকিৎসার জন্য ভারতে দিকে বিমানযোগে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি আছেন মোট ১৮ জন, এর মধ্যে সাতজনের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়েছে। লেহ জেলা প্রশাসন ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে দুই দিন স্কুল, কলেজ ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আরও বলা হয়েছে, বহিরাগতরা—নেপাল ও জম্মু–কাশ্মীরের ডোডা জেলা থেকে আসা যুবকদের—তাদের ভূমিকা তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্র ও লাদাখের প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, সহিংসতায় জড়িতের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনের আওতায় অভিযোগ আনা হতে পারে। পুলিশ সূত্র জানায়, দুই কংগ্রেস কাউন্সিলরের ভূমিকা তদন্তের বিষয়। এর পাশাপাশি, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়া এড়াতে লেহ জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে পাঁচজনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কার্গিলেও একই নির্দেশনা জারি হয়েছে এবং সেখানেও হরতালের ডাক দিয়েছে স্থানীয় দলগুলো।