উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো এখন জেনে গেছে তরুণ প্রজন্মের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের ঝড়। গত বুধবার মরক্কোর উপকূলীয় শহর আগাদিরের লাকলিয়া এলাকায় আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এই বিক্ষোভের পেছনে মূল চালিকা শক্তি হলো ‘জেনজি ২১২’ নামের এক অখ্যাত ও কম পরিচিত সংগঠন, যা তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, বুধবার লাকলিয়ায় একদল বিক্ষোভকারী পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্র লুট করানো। এই সংঘর্ষে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে গোলাগুলি ও টিয়ারশেল ছোড়া হয়। ঘটনাস্থলেই দুই জন নিহত হন এবং অন্যান্যরা আহত হন। বিক্ষোভকারীদের হাতে কিছু ছুরি থাকলেও তারা পুলিশ গুলির মুখোমুখি হওয়ার আগে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালান। তারা থানার সামনে ও পুলিশের গাড়িগুলোর উপর আগুন ধরিয়ে দেয় এবং কিছু দোকান-বাস্তবস্থাক লুটপাট করে।
প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণ থাকলেও ধীরে ধীরে এই বিক্ষোভ সহিংসতা রূপ নেয়। এর মধ্যেই মরক্কোর বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর মধ্যে মারাকেশের পুলিশ স্টেশনে আগুন দেওয়া ও কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালানো অন্তর্ভুক্ত। শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, তারা এ যুদ্ধের ব্যাপারে সচেতন ও উদ্বিগ্ন।
বিক্ষোভের মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে তিনটি: ব্যাপক বেকারত্বের অবসান, দুর্নীতি দূর করা, ও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করা। সংসদ সদস্য ও নাগরিকরা দাবিগুলো দ্রুত মান্য করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
বিক্ষোভের সূচনা হয় ২৮ সেপ্টেম্বর রাবাতে। তখন থেকেই তরুণ প্রজন্মের অসন্তোষ ফুটে উঠে। বিশেষ করে, জেনজি ২১২ নামে সংগঠনটি তরুণদের বিক্ষোভে নামার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে এসেছে। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে তরুণদের আহ্বান জানানো হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, আজকের মরক্কোতে যুবকদের মধ্যে বিষন্নতা, বেকারত্ব ও দুর্নীতির বিষাক্ত ছড়াছড়ি চলছে। তরুণদের মধ্যে ৩৫.৮ শতাংশ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাপিয়ে থাকা স্নাতকদের মধ্যে ১৯ শতাংশ বর্তমানে বেকার। গত চার দিনে এই আন্দোলন ব্যাপক উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে, সংগঠনের সদস্য সংখ্যা আগে ছিল মাত্র ৩ হাজার, যা এখন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপের দিকে এগোচ্ছে, তবে কিছু শহরে – ক্যাসাব্লাঙ্কা, ওউজদা ও তাজায় – এখনও কোনও সহিংসতা ঘটেনি। দেশের প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নৌচের পদত্যাগের দাবি ধীরে ধীরে জোরদার হচ্ছে। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে অস্থির হয়ে উঠছে।