তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে সরকার হিজড়াদের স্বীকৃতি দিলেও এখনো তারা সমাজে উপেক্ষিত। আইনের মাধ্যমে তাদের অধিকারগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। তবে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে তাদের জন্য। বগুড়াতেও সরকারের কিছু কিছু উদ্যোগ থাকলেও অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে এর সুফল পাচ্ছেন না হিজড়ারা। উন্নয়ন এবং সমাজকর্মীদের মতে, জীবন মান উন্নয়নে সরকার এবং হিজড়া অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে।
‘রাস্তায় চলতে গেলে মানুষ কথা বলেন, হাসপাতালে গেলে হিজড়া বলে চিকিৎসা পায় না’। হিজড়াদের গুরুমা হিসেবে পরিচিত সুমী এ ভাবেই তাদের নিগৃহীত হওয়া এবং বগুড়ার সমাজ সেবার অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন। আচরণ পরিবর্তন এবং সংযতভাবে চলাফেরা করতে চাইলেও অর্থনৈতিক দীনতাসহ মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে পুরানা পেশায় চলতে হচ্ছে তাদের। বগুড়ায় অক্ষর জ্ঞান দেয়ার জন্য একমাত্র বিদ্যালয়টিতেও বইখাতা বেতনপত্র কিছু দেয়া হয়নি ৪ বছর ধরে।
হিজড়ারা বলেন, ‘বই পায় না। খাতা কলম পায় না। আমরা লেখাপড়া শিখবো কি ভাবে। কর্ম না পেয়ে গ্রামে গ্রামে গান বাজনা করে খেতে হয় আমাদের। বাসস্থানের পাশাপাশি আমাদের কর্ম দিলে আমরা ভালোভাবে চলতাম। সরকার এতো অনুদান করছে এত বাজেট করছে আমাদের জন্যে। সেই টাকা কই যাচ্ছে!’
উন্নয়ন এবং সমাজকর্মীদের মতে, হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল ধরায় ফিরে আনতে প্রয়োজন সরকারের স্বীকৃতির বাস্তবায়ন এবং তাদের সক্ষম বাবা মার উদ্যোগ।
টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘স্বীকৃতি দিতে আইন করেছে সরকার। এই আইনকে বাস্তবায়নের জন্যে নিতিমালা দরকার।’ কবি ইসলাম রফিক বলেন, ‘তাদের আর্থিক সমস্যা না মেটালে। সমাজের চোখে তাদের সম্মানিত না করলে এই সমস্যা থেকেই যাবে।’
সরকারের নির্দেশে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে হিজড়াদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ করছে। আর দুর্নীতি এবং অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন সমাজসেবার উপ-পরিচালক সহিদুল ইসলাম খান।
২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর মন্ত্রীসভার বৈঠকে হিজড়া নীতিমালা অনুমোদন হলেও এখন পর্যন্ত আইনে রূপ নেয়নি নীতিমালাটি। বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় প্রায় ৮ হাজার হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ বসবাস করছে।