আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করতে বছরখানেক আগে দুইটি পৃথক সংগঠন ভেঙে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ গঠন করা হয়। ২০১৭ সালের ২১ মে সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটলেও এতদিনেও এর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যস্ততার কথাই জানিয়েছেন দলীয় নেতারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম জাগো বাংলা ২৪ ডট কমকে জানিয়েছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অধিকাংশ আইনজীবী নেতারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যস্ত থাকায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া পিছিয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের দাবি, নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলে এর মধ্য দিয়ে আরও কিছু নেতা দলে যোগ হতে পারতেন। এমনকি আসন্ন আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি আরও পোক্ত হতো।
দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতির মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং ঢাকা আইনজীবী সমিতি অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও বিভেদ সৃষ্টির কারণে গুরুত্বপূর্ণ দুই আইনজীবী সমিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা বারবার নির্বাচিত হয়ে আসছে। নতুন ঐক্যবদ্ধ কমিটি হওয়ার আগে থেকে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ নামে দুটি সংগঠন কাজ করে আসছিল। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুনের নেতৃত্বাধীন এই সংগঠন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সম্মেলন করতে পারেনি। অন্যদিকে, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রবীণ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ। ফলে একই দলের সমর্থক হলেও সাংগঠনিক কারণে আইনজীবীরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে এর প্রভাব পড়তে থাকে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনগুলোতে।
আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে দুই আইনজীবী সমিতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের পরাজয়ে ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি আইনজীবীদের দ্বন্দ্ব ও বিভেদ নিরসনে ওই দুই সংগঠনের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। পরে সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ও অনুগত আইনজীবীদের নিয়ে নতুন একক সংগঠনের নাম দেন ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’।
এরপর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদকে কেন্দ্র করে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৭ সালের ২১ মে। এই কমিটিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে আহ্বায়ক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদারকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপসকে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নামও ঘোষণা করা হয়।
শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমরা আশা করি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহের যে প্রক্রিয়া চলছে তার গতি বাড়িয়ে মফস্বল কমিটি করার পর জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন জাগো বাংলা ২৪ ডট কমকে বলেন, কমিটি হচ্ছে না বিভিন্ন কারণে। আগামী ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই এ বছর কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।