জমি ক্রয় করে জমির দখল না পেয়ে মামলা করেও পাওনা জমির দখল না পাওয়ার ঘটনা সচরাচর দেখা না গেলেও এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোনার রাজন্দ্রপুরে। পাওনা জমির দখল নেওয়ার জন্যে মামলা করেও ন্যায্য বিচার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি।
নেত্রকোনার রাজন্দ্রপুরের সঞ্জিত বর্মন নামের এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি বিগত ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে মোঃ সিদ্দিক মিয়া নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছ থেকে নেত্রকোনার রাজন্দ্রপুরে দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে মোট ৫৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। কিন্তু জমিটি ক্রয় করার পরও সঞ্জিত বর্মনকে তাৎক্ষনিক ভাবে জমির দখল বুঝিয়ে না দিয়ে অযথা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে থাকে। এবং এভাবে জমি ক্রয়ের ঘটনার প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর যখন জমির নতুন মালিক সঞ্জিত বর্মন জমির দখলদারিত্ব নেওয়ার জন্য তাগাদা দেয় তখন মোঃ সিদ্দিক মিয়া ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা উল্টো দুই লক্ষ চাঁদা দাবি করে এবং এই চাঁদা না দিলে জমির দখল দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। (এ নিয়ে আমাদের পূর্ববর্তী সংবাদটি পড়ুন)
খোঁজ নিয়ে জানা যায় এ বিষয়ে সঞ্জিত বর্মন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিতে চাইলেও বিভিন্নভাবে হুমকির শিকার হোন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ নেত্রকোনা জজ কোর্টে জমির দখলদারি পাওয়ার লক্ষ্যে একটি মামলা দায়ের করেন সঞ্জিত বর্মন। কিন্তু সকল সাক্ষ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, দীর্ঘ ৬ বছর পর গত সোমবার মামলাটির রায় দেওয়া হয়। এবং এ মামলার রায়ে আসামী মোঃ সিদ্দিক মিয়াকে খালাস করা হয়।
এই বিষয়ে সঞ্জিত বর্মন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, “আমাদের পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল নিজেদের একটি বাড়ি করবো। সে কারনেই আমার ছোট ভাই শিপলু বর্মন যুক্তরাজ্যে থেকে দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অর্থ সঞ্চয় করে দেয় এই জমি ক্রয় করার জন্য। কিন্তু ক্রয়ের পরেও জমির দখল পেলাম না! জমির দখল হস্তান্তর নিতে জমির বিক্রেতা মোঃ সিদ্দিক মিয়াকে চাপ দিলে সে উল্টো আমাদের কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমাকে হুমকিও দেয়। আমি বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থার উপর আস্থা রেখে এই বিষয়ে মামলাও দায়ের করি, আজ প্রায় দীর্ঘ ৬ বছর পর মামলাটির রায় হলো। কিন্তু কি কপাল আমাদের! দীর্ঘদিন লড়াই করেও নিজেদের ক্রয় করা জমিটি পেলাম না। সকল ধরনের নথি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মাননীয় আদালত কিভাবে আমার জমি আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারেননি? তবে কি আমরা সংখ্যালঘু বলেই এ ধরনের আচরণ আমাদের সাথে? এ দেশে সংখ্যালঘু হওয়াটাই কি আমাদের পাপ? সংখ্যালঘুদের কোন স্বপ্ন থাকতে নেই?”
মোঃ সিদ্দিক মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “দেখেন, এসব অভিযোগ একেবারে মিথ্যা। আদালত আমার পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমাকে দোষী সাব্যস্ত করলে আমি এসকল অভিযোগ মেনে নিতাম। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা জজ সাহেবই নিয়েছেন। আর কিছু বলার নাই আমার।”
এদিকে মামলাটির রায় নিয়ে স্থানীয় সংখ্যালঘুধের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেরই ধারনা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে আদালত মামলার এই রায়টি দিয়েছেন। আবার অনেকেই বলছেন শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হওয়ার কারনেই জমিটি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সঞ্জিত বর্মণ। রাজন্দ্রপুরের একজন বাসিন্দা হারাধন বনিক বলেন, “পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে বিচারক সকলেই যখন রাজনৈতিক ছায়াতলে বসবাস করে তখন এধরনের ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক। আমি মোটেও অবাক হীনই।” আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা প্রণয় ঘোষ বলেন, “সংখ্যালঘু হওয়ার কারনেই সঞ্জিতের মতো এতো নির্ঝঞ্ঝাট একজন মানুষ আজ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এতো বছর মামলার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করলেও আজ সে তার পাওনা জমিটুকু পায়নি।”