গতকাল ২৬ আগস্ট ‘এথিস্ট ইন বাংলাদেশ’ নামক একটি নাস্তিক্যবাদী ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে এই ম্যাগাজিনের লেখক, সম্পাদক ও প্রকাশককে আসামী করে মোট ৫০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনাল-এ মামলা দায়ের হয়। উক্ত ম্যাগাজিনের ৭ম সংখ্যায় ইসলাম ধর্ম, কোরবানি প্রথা ও ইসলাম ধর্মের নবী মোহাম্মদকে কটূক্তি করার অভিযোগে হৃদয় কাজী নামের এক হেফাজত-এ-ইসলাম কর্মী এই মামলাটি দায়ের করেন।
হৃদয় কাজীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক জনাব মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেনের আদালত এটিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ডিসি সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম ডিভিশন (সি.টি.টি.সি), ডিএমপি কে অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য যে সি.টি.টি.সি কে ১৪ অক্টোবরের ভেতর এই মামলা তদন্ত করে তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এই মামলার নাম্বার ২৫৯/২০১৯।
এই মামলাতে বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ব্রিফিং এ বলেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা ফৌজদারি বিধি অনুযায়ী একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এহেন কাজ সমাজে ঐক্য ও সম্প্রীতি বিনষ্ট করে, সুতরাং ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করা বা কটূক্তি করার কোন সুযোগ নেই। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই ম্যাগাজিনটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধর্মের সম্পর্কে কুৎসা রটিয়ে আসছে এবং এদের ব্যাপারে একাধিক মামলা আদালতে রয়েছে যার একটিতে ইতিমধ্যে পুলিশ চার্জশীটও দাখিল করেছে।
মামলার বাদী হৃদয় কাজী হেফাজত ইসলামের একজন সক্রিয় কর্মী বলে জানা যায়। এইদিন সোমবার এই মামলাকে ঘিরে আদালতে তীব্র উত্তেজনা দেখা যায় এবং হেফাজতের শত শত কর্মীরা আদালত প্রাঙ্গন ঘিরে রাখে। মামলা দায়েরের পর তারা নারায়ে তাকবীর আল্লহ হু আকবর বলে স্লগান দিতে দিতে দিতে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের দিকে অগ্রসর হয়। এই সময় এই মিছিল থেকে কিছু রিকশা ও গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
এই মামলার সম্পাদক আরমান আহমেদ, সহ সম্পাদক এম ডি তোফায়েল হোসেন প্রকাশক সেক্যুলার পাবলিশার্স সহ মোট অভিযুক্তের সংখ্যা ৫০ জন। যাদের মধ্যে রয়েছেন (১) আরমান আহমেদ (২) তানভীর আহমেদ (৩) কে এম মাহফুজুর রহমান (৪) আমিনুল হক (৫) কাজী অয়াহিদুজ্জামান (৬) প্রশান্ত বাড়ই (৭) আদনান সাকিব (৮) এমডি ওমর ফারুক (৯) সেক্যুলার পাবলিশার্স (১০) মোহাম্মদ ওমর সানী (১১) নিলুফার হক (১২) হায়াত হামিদ উল্লাহ রবিন (১৩) এম ডি তোফায়েল হোসেন (১৪) হোসনী মোবারক (১৫) সানজিদা সামিরা তামান্না (১৬) রুমন মিয়া (১৭) ফারজানা ইসলাম (১৮) রুমানা আফরোজ রাখি (১৯) বিপ্লব পাল (২০) অরুনাংশ চক্রবর্তী (২১) আসিফ আবরার টিটো (২২) সাইফুল ইলসাম (২৩) রাশেদুল আলম (২৪) চিন্ময় দেবনাথ (২৫) জোবায়ের হোসেন (২৬) এমডি আনিছুজ্জামান (২৭) মিফতাহুর রহমান (২৮) এম ডি সাব্বির আহমেদ (২৯) এনামুল হক (৩০) সৈয়দ সামুন আলী (৩১) আব্দুল্লাহ বাকি (৩২) এহসানুল করিম (৩৩) আবু হানিফ (৩৪) এমডি মাহাদি হোসেন (৩৫) এম ডি রেজাউল ইসলাম (৩৬) কাওসার হামিদ (৩৭) ডলার বিশ্বাস (৩৮) এমডি আনিছুজ্জামান (৩৯) হাফিজুর রহমান (৪০) সিদ্দিকুর রহমান (৪১) এম ডি লায়েক মিয়া (৪২) এম ডি মনোয়ার হোসেন (৪৩) নাইমুল ইসলাম (৪৪) আব্দুল জলিল (৪৫) এম ডি খালেদ হোসেন (৪৬) কাশিফ রেহান (৪৭) রুবেল চৌধুরী (৪৮) সুজন চন্দ্র দেব (৪৯) এম এম জাকির হোসেন জ্যাকি (৫০) সুলতানুল আরেফিন সিয়াম।
এই ব্যাপারে মামলার বাদী জনাব হৃদয় কাজীর সাথে কথা বলে জানা যায় যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ম্যাগাজিনটির কার্যক্রম লক্ষ্য করে আসছেন। তিনি বলেন, “এই ম্যাগাজিনটি একটি নাস্তিকদের ম্যাগাজিন। তারা ইসলামের শত্রু। তাদের প্রত্যেকে ইসলামের বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়েছে। এদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সকলের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিতে হবে। এবং এর সাথে এদের পরিবারকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই আমাদের ইসলামি তৌহীদী জনতা শান্তি পাবেন।”
এই মামলার সংবাদে হেফাজতের নেতা বাবুনগরী উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, এভাবেই জাহান্নমের কীটদের শায়েস্তা করতে হবে। আইনের কাছ থেকে এরা বেঁচে গেলেও তোহিদী জনতার আদালত থেকে এদের নিস্তার নেই”
এই ব্যাপারে এই ম্যাগাজিনের সম্পাদক আরমান আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।